বিশ্ব ব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন না করলে সমস্যা কি? | What is the problem if you do not observe fasting and Eid on the same day worldwide?

বিশ্ব ব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন না করলে সমস্যা কি? | What is the problem if you do not observe fasting and Eid on the same day worldwide?


বিশ্ব ব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন না করলে যেই সমস্যাগুলাে হতে পারে তা নিম্নরূপ:
এক: বাংলাদেশে বর্তমান প্রচলিত আমলের কারণে পবিত্র রামাদানের প্রথম দিকের এক বা দুই দিনের সাওম আমরা কখনই পাইনা । কারণ মাসআলা মতে আমাদের এক বা দু'দিন পূর্বেই পবিত্র রামাদান মাস শুরু হয়ে যায় । এটা জেনেও আমরা ঐ এক বা দুদিন ফরয সাওম রাখিনা।
দুই: মাসআলা অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে যেদিন পহেলা শাওয়াল হিসেবে ঈদ পালন হয় আমরা সেদিন ২৯ বা ৩০ রমযান হিসেবে সাওম রাখি।
তিন: বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রতিদিনই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বহু লোক যাতায়াত করছে। এ ধারাবাহিকতায় মধ্য প্রাচ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সাওম শুরু করে বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির সাওম হবে ৩১ বা ৩২টি। আবার বাংলাদেশে সাওম শুরু করে অন্য দেশে গিয়ে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির সাওম হবে ২৭ বা ২৮টি। অথচ হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯ এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। তাই পবিত্র ইসলাম ধর্মে ২৭, ২৮ অথবা ৩১, ৩২টি সাওমর কোন বিধান নেই।

চার: হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী তাকবীরে তাশরীক বলা শুরু করতে হবে আরাফার দিনের ফজর সালাত থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে উক্ত তাকবীর বলা শুরু করা হয় এখানকার স্থানীয় ৯ই জিল-হাজ্জ। যে দিন সারা পৃথিবীতে ১০ বা ১১ জিল-হাজ্জ। ফলে ঐ দিনটি আরাফার দিনতাে নয়ই বরং আরাফার দিনের পরের দিন বা তৎপরবর্তী দিন। তাহলে ফলাফল দাড়ালাে বাংলাদেশের স্থানীয় তারিখ অনুসরণের কারণে আমাদের পাঁচ বা দশ ওয়াক্ত সালাতের ওয়াজিব তাকবীর ছুটে যাচ্ছে। আবার শেষ দিকে গিয়ে এমন এক বা দু'দিন তাকবীর বলছি যখন আমলটির ওয়াজিব আর বাকী নেই।

পাঁচ: যে সকল সম্মানিত ভাইয়েরা একাধিক পশু কুরবানী দেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশের স্থানীয় ১১ ও ১২ জিল-হাজ্জ তারিখে কুরবানী দিয়ে থাকেন । কিন্তু কুরআন, সুন্নাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ সময় সারা বিশ্বে ১৩ বা ১৪ জিল-হাজ্জ। (যদি চাঁদ দেখায় ২দিনের তারতম্য হয়)। তাহলে ফলাফল দাঁড়ালাে তাদের দু’দিনের কুরবানী-ই বিফলে যাচ্ছে। কারণ কুরবানী করার সময় ১০ থেকে ১২ জিল-হাজ্জ। ১৩ ও ১৪ জিল-হাজ্জ কুরবানী করা যায়না।

ছয়: রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন যে, আরাফার দিনে সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর উপর এ বিশ্বাস রাখি, ঐ দিনের সাওমের বিনিময়ে আল্লাহ পাক সাওম পালনকারীর পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম শরীফ, খন্ড-১, পৃঃ-৩৬৭) হাদীসে ঘােষিত এ মহান পূন্য লাভের আশায় অগণিত মুসলিম নর-নারী বাংলাদেশের স্থানীয় ৯ জিল-হাজ্জ সাওম রাখেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ঐ দিন মক্কা মােআজ্জমা সহ সারা বিশ্বে ১০ বা ১১ জিল-হাজ্জ। অর্থাৎ কোন ভাবেই ঐ দিনটি আরাফার দিনতাে নয়ই বরং কুরবানীর দিন বা তাশরীকের প্রথম দিন। যে দিন গুলােতে সাওম রাখা সকল ইমাম ও আলেমের ঐক্যমতে হারাম। তাহলে ফল হল স্থানীয় চাঁদ দেখার হিসেবে একটি নফল সাওম রেখে হারামে নিমজ্জিত হচ্ছেন অগণিত মুসলিম নারী- পুরুষ।

সাত: পবিত্র লাইলাতুল কুদর আল্লাহর নিকট এক একটি সুনির্দিষ্ট রাত। যা সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য একই রাতে সংগঠিত হয় । কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন দিন এ রাত গুলাে নির্ধারণ করার ফলে এসকল রাতের ফযীলত থেকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে । যখন সংবাদ পৌছেনি তখন স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এসব পর্ব পালন ওজর হিসেবে যুক্তিযুক্ত ছিল কিন্তু বর্তমানে সে ওজর নেই। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন “নিশ্চয়ই আমি এ কুরআনকে নাযিল করেছি কৃদরের রাতে।” (সুরাহ আল কদর)

পবিত্র লাইলাতুল কদর আল কুরআন ঘােষিত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আমরা যারা একদিন পরে সাওম শুরু করি আমরা তাে কখনই ঐ রাত পাইনা। কারণ আরব বিশ্বে যেদিন বেজোড় রাত আমাদের দেশে সেদিন জোড় রাত। তাদের বেজোড় রাত হিসাবে কৃর হলে আমরা কখনই কুদর রাত পেতে পারিনা। কারণ এ রাত তাে একটিই। যা অঞ্চলের ভিন্নতায় কয়েক রাত মেনে নেয়া হাস্যকর বৈকি।
আট: আল্লাহর (সুব:) হুকুমে মূসা (আ:) যখন তার জাতিকে ফিরআউনের রাজত্ব থেকে উদ্ধার করে পলায়ন করছিলেন, আর ফেরআউন তার সেনাবাহীনি নিয়ে তাদের ধাওয়া করে এমন এক স্থানে এসে পৌছায় যে, মুসা (আ:) ও তার জাতির সামনে সমুদ্র, পালানাের কোন উপায় নেই আর পিছনে ফেরআউন ও তার সেনাবাহিনী তাদের হত্যার জন্য ধাওয়া করে আসছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

{فلا تراءى الجمعان قال أصحاب موسي إنا لمدركون ( ۱۱ ) قال كلا إن معي ربي سيهدين ( ۱۲ ) فأوا إلى موسى أن اضرب بعصاك البحر فانفلق فكان كل فرق كالطود العظيم ( ۶۳ ) وألفنا ثم الآخرين ( 64 ) وأنجينا موسى ومن معة [1 - 1: sysi] {et t3 (13) ৬৮

অর্থ: “অতঃপর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সাথীরা বলল, অবশ্যই আমরা ধরা পড়ে গেলাম!' মূসা বলল, কক্ষনাে নয়; আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। নিশ্চয় অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ দেবেন। অতঃপর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম, তােমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর। ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়সদৃশ হয়ে গেল। আর আমি অপর দলটিকে সেই জায়গায় নিকটবর্তী করলাম, আর আমি মূসা ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে উদ্ধার করলাম, তারপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে দিলাম ।” (সুরা শু'আরা ২৬:৬১) আল্লাহ (সুব:) মূসা (আ:) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ফেরআউন ও তার সেনাবাহিনীর হামলা এবং সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করলেন এবং ফেরআউন ও তার বাহিনীকে নিমজ্জিত করে চিরতরে দুনিয়া ও আখেরাতের আযাবে নিক্ষেপ করলেন। এর তারিখ ছিল দশই মুহাররম।

নবী (সা:) হিজরত করে মদীনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহুদীদেরকে আশুরার দিন সাওম পালন করতে দেখলেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, এটা সেদিন যেদিন আল্লাহ (সুব:) মূসা (আ:) কে বনী ইসরাইলনসহ ফেরআউনের উপর বিজয় দান করেছেন। তার সম্মানার্থে আমরা সিয়াম পালন করে থাকি। তখন নবী (সা:) বললেন: আমরা তােমাদের চেয়েও মূসা (আ:) এর অধিক নিকটবর্তী। অত:পর তিনি এদিনে সিয়াম পালন করার নির্দেশ দিলেন। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে: নবী (সা:) মক্কার মানুষ, মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এলেন। সেখানকার দুরুত্ব ছিল প্রায় সােয়া চারশত কিলােমিটার। তাছাড়া এই ঘটনাটি ঘটে মিসরে। মক্কা ও মদীনা এশিয়ায়। আর মিসর | আফ্রিকায় । নবী (সা:) তারিখ নিয়ে ঝগড়া করেননি। বরং সে তারিখেই সিয়াম পালন করেছেন। তাই আপনি এখন দশই মুহাররম আশুরার সিয়াম কোন তারিখে আদায় করবেন? যদি আরবদের নতুন চাঁদ দেখার তারিখ থেকে সিয়াম পালন করেন তবে আশুরাই হবে। আর যদি বাংলাদেশের নতুন চাঁদ দেখা অনুযায়ী সিয়াম পালন করেন তাহলে আশুরা আশুরা থাকবে না। বরং চাদের এগার বা বারাে তারিখে হবে। আর আরবীতে তাকে বলে আল হাদী আশার বা আসসানী আশার। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আশুরা পেতে হলে পৃথিবীতে যেদিন নতুন চাঁদ দেখা দিবে সেদিনকেই প্রথম তারিখ হিসাবে মেনে নিতে হবে। নতুবা আপনার ভাগ্যে আশুরা জুটবে না। সঠিক সময়ে/দিনে সিয়াম পালন করা হলে লাইলাতুল কদর, ঈদ, কুরবানী ও মুহাররামের সিয়াম সবকিছু সঠিকভাবে পালন করা সহজতর হবে এবং সমগ্র মুসলিমের মাঝে থাকবেনা কোন বিচ্ছিন্নতা-বিভেদ।

Previous
Next Post »