নুতন চাঁদ পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে এবং চাঁদ কোন কোন সময়ের নির্দেশক’ যেহেতু অত্র ফাতওয়ায় আলােচিত সকল ইবাদাত উদযাপন চাঁদের তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই নুতন চাঁদ পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সে ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে ভৌগলিক গবেষণার ফলাফল হলাে প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দৃষ্টিগােচর হবে। কারণ চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে চাঁদ এবং সূর্য প্রায় একই সময়ে পূর্ব দিগন্তে (জাপানে) উদিত হয়। এবং উদয় স্থলের পূর্ণ বিপরীত মেরুতে (দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে) সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রায় ৪৯ মিনিট পরে চাঁদ অস্ত যায়। অর্থাৎ সর্ব পশ্চিম দিগন্তে প্রথম তারিখের চাঁদ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও প্রায় ৪৯ মিনিট আকাশে থাকে। এ সময় সূর্যাস্তের পর দিগন্তে চাঁদের যে কিঞ্চিত অংশটুকু সূর্যের আলােয় প্রতিফলিত হয় তাকেই আমরা নুতন চাঁদ হিসেবে দেখি। প্রথম দিনের চাঁদ সূর্যের ৪৯ মিনিট পরে অস্ত যায় বলেই ২য় দিনের চাঁদ সুর্য উদয়ের ৪৯ মিনিট বিলম্বে পূর্বাকাশে উদিত হয়। কারণ আকাশের যে দিগন্ত রেখা আটলান্টিকের জন্য অস্তস্থল, আবার সে দিগন্ত রেখাই জাপানের জন্য উদয়স্থল। এভাবে প্রতি দিনই উদয়ের বিলম্বতায় ৪৯ মিনিট করে যুক্ত হতে থাকে । একারণেই ২৯ দিনে চাঁদকে ২৯টি স্থানে উদয় হতে দেখা যায়। আবার সাড়ে ২৯ দিন পরে চাঁদ ২৪ ঘন্টা ঘুরে এসে পরবর্তী চন্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার নুতন করে সুর্যের সঙ্গে প্রায় একই সময় উদিত হয়। গবেষণালব্ধ আলােচিত তথ্যগুলােকে সঠিক প্রমাণিত করছে এ হিসেবটি । প্রতি দিনের চাঁদ উদয়ে বিলম্ব ঘটে ৪৯ মিনিট। প্রতি চান্দ্র মাসের পরিধি। হচ্ছে সাড়ে ২৯ দিন ৬০ মিনিট = ১ ঘন্টা। সুতরাং (৪৯ ঢ ২৯১/২ দিন / ৬০ মিনিট) = ২৪ ঘন্টা। এভাবেই প্রতি সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ ২৪ ঘন্টা সময় অতিক্রম করে পরবর্তী চান্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার পূর্বের স্থানে সূর্য উদয়ের সমান সময়ে উদিত হয়। সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে, জাপান ও আটলান্টিকের মধ্যকার ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সুর্য ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার মধ্যে ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট।
ভৌগলিক ভাবে প্রমাণিত যে, গ্রিনিচ মান সময়ের (GMT) দিক থেকে পৃথিবীর সর্ব প্রথম সূর্য উদয়ের দেশ জাপান। যার ভৌগলিক অবস্থান ১৪২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ। এ উদয় স্থল হিসেবে পূর্ণ বিপরীত মেরুর অন্তস্থল হল দক্ষিণ পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর। যার ভৌগলিক অবস্থান ৩৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ দক্ষিণ অক্ষাংশ। এ উদয় ও অস্ত স্থলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা এবং অবস্থানগত দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রী । কারণ প্রতি ১ ডিগ্রীতে সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট। চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে জাপানে উদিত হয়ে ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যায় সুর্য যখন আটলান্টিকে অস্ত যায়, চাঁদ তার পরেও আটলান্টিকের আকাশে থাকে প্রায় ৪৯ মিনিট। ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে যদি সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট তাহলে এর অর্ধেক পথ অর্থ: ৯০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হবে সাড়ে ২৪ মিনিট ।
মধ্য প্রাচ্যের (ইয়েমেন, রিয়াদ ও বাগদাদ) অবস্থান ৪৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে হওয়ায় উদয় স্থল জাপান ও অস্ত স্থল আটলান্টিকের সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের ভৌগলিক অবস্থানের ব্যবধান ৯০ ডিগ্রী। যে কারণে মধ্য প্রাচ্যে যখন সূর্যাস্ত হয় তার পরেও চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ মধ্য প্রাচ্যের আকাশে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সকল সময়ে সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্য দৃষ্টি গােচর হবে। এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ সমূহে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের স্থায়িত্ব আকাশে বেশি সময় থাকবে। যার ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখে ঐ সকল পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশে চাঁদ ক্ৰমানূয়ে বেশী সময় ধরে দেখা যাবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দেশ সমূহ ক্রমান্বয়ে উদয় স্থলের নিকটবর্তী হওয়ায় সূর্যাস্তের পরে এখানকার আকাশে ১ তারিখের চাঁদের স্থায়ীত্ব কম সময় থাকে এবং চাঁদ দিগন্তের আকাশে কম উঁচুতে থাকে বলেই উদয়স্থলের নিকটবর্তী দেশ সমূহ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, চীন বা জাপানে কখনই চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ দেখা যাবে না। উল্লেখিত আলােচনায় প্রমাণিত যে, প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দেখা যাবে।
এর পরে আমাদের জানা প্রয়ােজন, চাঁদ কোন কোন সময়ের নির্দেশক?
সময়কে বিশ্লেষণ করলে আমরা সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন-রাত, মাস ও বছর সময়ের এ ৬টি স্তরের অস্তিত্ব খুজে পাই। সুর্য ও চাঁদ উভয়েই সময়ের উল্লেখিত সকল স্তর অথবা কোন না কোন স্তরের নির্দেশক । যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
[s : 5[
অর্থ: সূর্য ও চাঁদ উভয়েই সময়ের হিসেব নির্দেশক। (সুরা আর-রহমান ৫৫:৫) এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুর্য ও চাঁদ উভয়ে একই ভাবে সময়ের উল্লেখিত স্তরগুলাের নির্দেশক? না কি এক একটি এক এক ধরনের সময় নির্দেশক?
এ বিষয়ে গবেষণার ফলাফল হল সুর্য সময়ের উল্লেখিত ৬টি স্তরের প্রতিটিরই নির্দেশক। অর্থাৎ সূর্যের পরিভ্রমণের মাধ্যমে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন-রাত, মাস ও বছরের হিসেব নির্ধারণ করা হয়। পক্ষান্তরে চাঁদ শুরু ও শেষ হওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র বছর ও মাসের হিসেব নির্ধারিত হয় । কিন্তু চাঁদের শুরু-শেষ, পুর্ণতা ও ক্ষয়ের সঙ্গে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এবং দিবা-রাত্রির আগমণ-প্রস্থানের কোন সম্পর্ক নেই। পবিত্র কুরআনের নিমােক্ত আয়াত এটাই প্রমাণ করে ইরশাদ হচ্ছে
{ هو الذي جعل الشمس ضياء والقمر نورا وقدره منازل لتعلموا عد د السنين | : ه
অর্থ: “তিনি আল্লাহ যিনি সূর্যকে করেছেন প্রখরতাপূর্ণ আলাে আর চাঁদকে করেছেন স্নিগ্ধময় আলো। আর চাঁদের জন্য নির্ধারণ করেছেন অনেক গুলো মানযিল (২৯ দিনে ২৯ টি উদয় ও অস্তস্থল) যাতে তােমরা জানতে পার বছরের সংখ্যা ও হিসাব।" (সুরা ইউনুস ১০:৫) অত্র আয়াতে কারীমায় “বছর” কথাটি স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও “মাস” কথাটি স্পষ্ট উল্লেখ না করে বরং তাকে শব্দে রূপকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে । কারণ চান্দ্র বছর হয় সুনির্দিষ্ট ১২টি চন্দ্র মাস অথবা ৩৫৪ দিনের সমন্বয়ে। এতে কোন কম বেশী হয়না। কিন্তু চান্দ্র মাস গুলাে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক দিন নিয়ে গঠিত নয়। বরং কোন মাস ২৯দিনে আবার কোন মাস ৩০ দিনে হয়। অন্যদিকে এবছর যে চান্দ্র মাসের ৩০ দিনে হবে, আগামী বছর সে মাসটি ৩০ দিনে হতে পারে, আবার ২৯ দিনেও হতে পারে। কিন্তু মাস বলতে সুনির্দিষ্ট ৩০ দিনকেই বুঝায়। এ কারণেই মহাবিজ্ঞ মহান রাব্বুল আলামীন অত্র আয়াতে চান্দ্র মাসকে বা মাস না বলে বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে প্রমাণিত যে "চাঁদ শুধুমাত্র মাস ও বছরের সময় নির্দেশক। সময়ের এ ২টি স্তর সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাসীর জন্য সমভাবে প্রযােজ্য। পক্ষান্তরে সূর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সময়ের প্রথম ৪টি স্তর সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা ও দিন-রাত স্থানীয়ভাবে স্থানীয় মানুষের জন্য প্রযােজ্য।
প্রাসংঙ্গিক কিছু প্রশ্ন এবং তার জবাব আলােচিত ফাতওয়ার প্রাসংঙ্গিকতায় কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক । ঐ সব প্রাসংঙ্গিক প্রশ্নাবলীর জবাব নিয়ে আলােচনা করা হল এক: যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল জায়গায় একই সঙ্গে দিন ও রাত হয়না । বরং এক স্থানে যখন রাত অন্য স্থানে তখন দিন। তাহলে কুরআন, সুন্নাহ এবং ফিকহের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই দিনে সমগ্র বিশ্বে সাওম, ঈদ, কুরবানী ইত্যাদি ইবাদত পালন করা কীভাবে সম্ভব?
জবাব অত্র প্রশ্নের জবাবটি পুরােপুরি ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ প্রশ্নের জবাব জানার পূর্বে ভৌগলিক কিছু ধারণা অর্জন একান্তই দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন, প্রতি চান্দ্র মাসের নুতন চাঁদ সকল সময় পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে দৃষ্টি গােচর হবে? না কি বিভিন্ন মাসের চাঁদ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখাে যাবে?
যেহেতু প্রমাণিত যে, নুতন চাঁদ সকল সময়ই মধ্য প্রাচ্যের যে কোন দেশে সর্ব প্রথম দৃষ্টি গােচর হবে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী সময়ের দেশ জাপানবাসীর জন্য ১ম তারিখের সাওম রাখার সম্ভাব্যতা সর্বাধিক প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু গবেষণায় সুপ্রমাণিত যে, ঐ দিন জাপানবাসীর জন্যও সাওম রাখা সম্ভব। যেমন বছরের সবচেয়ে ছােট রাত জুলাই মাসে যদি আলােচনায় আনা হয় তবে দেখা যাবে, জুলাই মাসে সর্ব শেষ সূর্যাস্ত হয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। তাহলে মধ্য প্রাচ্যে সূর্যাস্তের পর পর সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখা গেল। এই সময় পৃথিবীর সর্বপূর্ব স্থান জাপানে রাত ১টা ২৮ মিনিট। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব ৯৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ফলে স্থানীয় সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৬ ঘণ্টা ২৮ মিনিট অগ্রগামী। তাহলে ফলাফল দাড়াল মধ্য প্রাচ্যে সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদ দেখা গেলে জাপানে সে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছতেছে রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ জুলাই মাসে সাহরী খাওয়ার সর্বনিম্ন সময় হলাে ৩টা ৪৩ মিনিট। তাহলে জাপানবাসী চাঁদ উদয়ে সংবাদ পাওয়ার পরেও সাওম রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য সময় পাচ্ছেন প্রায় ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট। যা সাহরীর জন্য কোন বিবেচনায়-ই অপ্রতুল নয়। উপরন্ত ঐ সময়ের মধ্যে তারাবীর সালাত আদায় করাও সম্ভব। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের জন্য আমল করা কোন ভাবেই কষ্টকর নয়। কারণ যত পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের দিকে আসা হবে তারা চাঁদ উদয়ের সংবাদের পরে সাহরী খাওয়ার জন্য ততবেশী সময় পাবে। দুই: যদি প্রশ্ন করা হয়, আমরা বাংলাদেশে যখন ইফতার করি তখন আমেরিকায় ভাের, আবার আমরা যখন সাহরী খাই তখন আমেরিকায় বিকাল, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে একই দিনে আমল করা কি করে সম্ভব?
জবাব: অত্র প্রশ্নের উত্তর বুঝার জন্য দু'টি মৌলিক বিষয় গভীর ভাবে স্মরণ রাখতে হবে। এক: চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট আমলগুলাে সমগ্র পৃথিবীতে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবেনা। বরং একই দিনে (অর্থ: শুক্র, শনি, রবি- --বুধ বা বৃহস্পতিবারে) এবং একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দুই: যেহেতু সব সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখা যাবে তাই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোন দেশের সময়ের হিসেব মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের সময়ের সঙ্গে নয়। তাহলে মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার ১ রমযান। এখন সমগ্র বিশ্বে ১ রমযান হিসেবে শুক্রবারে সাওম রাখা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্যপ্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ সেহরির সর্বশেষ সময় সীমা কখনই ৩টা ৪৩ মিনিটের নিমে আসেনা। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে সাওম রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাচ্ছেন (৩:৪৩মিঃ ১:২৮ মিঃ) ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এমনিভাবে ১২০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহাে, রাশিয়ার টালুমা, গ্রটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টায়। ফলে বছরের সবচেয়ে ছোট রাত চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ রমযানের সাওম রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্যে তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট ।
অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার সাওম রাখা সম্ভব। এরপরে ১০৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মােঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তারপরে ৯০ডিগ্রী পুর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্ব পাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে রাত ৯টায় এবং ৬০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় । তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গােলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার ১ রমযানের সাওম রাখা সম্পূর্ণ সম্ভব। এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলােচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পুর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রমযানের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পুর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বুরুন্ডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে ঐ অঞ্চল সমুহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায় ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ রামাদানের সাওম রাখতে তারা সময় পাবেন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। এমনি ভাবে ১৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহ চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় । ০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগাে, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় । আরাে পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় । এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় । এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌছবে বেলা ১১টায়। ৯০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌছবে বেলা ১০ টায়। ১০৫ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুকয়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে ১ রমযান হচ্ছে শুক্রবার। অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলাে যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে ১ রমজানের সাওম পালন করবে । উল্লেখিত আলােচনার সারকথা হলাে শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ ঘন্টা ২৮ মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তা হলাে শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন ।
অতএব জাপানে শুক্রবারের সাওম শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে সাওম শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ ঘন্টা পরে। যেমন আমাদের বাংলাদেশে আমরা সাওম রাখলাম শুক্রবার। কিন্তু পাবত্য চট্টগ্রামে সাহরীর শেষ সময় যদি হয় ৪টা ৩০মিনিট, তবে রাজশাহীতে সাহরীর শেষ সময় হবে আরাে ১৩ মিনিট পরে অর্থাৎ ৪টা ৫৩ মিনিট। তাহলে বাংলাদেশে শুক্রবারের সাওম পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হল ১৩ মিনিট পূর্বে এবং রাজশাহীতে শুরু হল ১৩ মিনিট পরে । ঠিক তেমনি সমগ্র পৃথিবীতে সাওম শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ পিছ হলেও দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন । অতএব সমগ্র পৃথিবীতে অভিন্ন দিন ও তারিখে সাওম রাখা এবং ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব। তিন: যদি প্রশ্ন করা হয়, যে সকল ইমাম, ফকীহ নিজ নিজ কিতাবে উক্ত মাসআলা লিখেছেন আবার তারাই নিজেদের ফাতওয়ার বিপরীতে এলাকা ভিত্তিক আমল করেছেন। এর কারণ কি?
জবাবঃ ইমাম ও ফকীহগণ তাদের ফাতওয়ার বিপরীত আমল করেছেন একথা ঠিক নয়। তারা সর্বপ্রথম চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযােগ্য সূত্রে যতটুকু এলাকায় পৌছানাে সম্ভব হয়েছে ততটুকু এলাকায় আমল করেছেন। এ ছাড়াও সত্য সন্ধানী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য এ প্রশ্নের জবাব খুবই সহজ। তা হল উপরােল্লেখিত ইমাম ও ফকীহগণের সকলের জীবদ্দশায়ই আধুনিক উন্নত ইলেকট্রনিক সংবাদ মিডিয়া ছিলনা। যার ফলে তারা তাৎক্ষনিকভাবে চাঁদ দেখার সংবাদ এক দেশ থেকে অন্য দেশে দিতে বা নিতে পারেন নি। এ ওজর বা বাধ্যবাধকতার কারণেই তারা বাহ্যিক চোখে যেদিন যে অঞ্চলে চাঁদ দেখেছেন এবং যতদূর পর্যন্ত সংবাদ দিতে নিতে পেরেছেন ততদূর পর্যন্ত অঞ্চলে আমল করেছেন। অবশ্যই এটা তাদের ভুল ছিলনা বরং সময়ের দাবীতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অসুবিধার কারণে তাদের এ আমল সম্পূর্ণ যুক্তি সঙ্গত ছিল। ওজর সম্বলিত তাদের সে আমলই কালের পরিক্রমায় সমাজের প্রতিটি স্নায়ু মিশে গেছে । কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদানে বর্তমানে ইমাম ও ফকীহগণের প্রদত্ত মূল ফাতওয়ার বিপরীত আমল করার কোন সুযােগ নেই। চার: যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন মুফতি যখন নিজ ফাতওয়ার বিপরীতে আমল করেন তখন তার ফাতওয়া অকার্যকর হয়ে যায় কি না?
জবাব: যদি কোন মুফতি তার প্রদত্ব ফতোয়ার বিপরীত আমল করেন তবে কখনই তার ফাতওয়া অকার্যকর হয়না । কারণ উছুলে হাদীস (হাদীস বিশ্লেষন করার মূলনীতি) এবং উসুলে ফিকহ (মাসয়ালা রচনার মূলনীতি) এর বিধান হল, যদি একই বিষয়ে একই বর্ণনাকারীর বর্ণনা এক রকম আর আমল অন্য রকম হয় তখন দলিলের ক্ষেত্রে আমলের উপরে বর্ণনা প্রাধান্য পাবে। কারণ বর্ণনার ক্ষেত্রে কোন ওজর নেই কিন্তু আমলের ক্ষেত্রে কোন কোন ওজন থাকা স্বাভাবিক। আর এ বিষয়ে কোন মুফতি নিজ ফাতওয়ার বিপরীত আমল করেননি। বরং তারা এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তাদের সাধ্য অনুযায়ী বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন । পাঁচ: যদি প্রশ্ন করা হয়, ফাতওয়ায় উপস্থাপিত দলীল সমূহের মূল ফিকহ গ্রন্থগুলাে আমাদের সম্মানিত আলেমগণ পড়েন না?
জবাব: এ প্রশ্ন আমাদেরকে না করে তাদেরকে করাই যথার্থ হবে। কারণ তারা ঐ সকল মূল কিতাবগুলাে পড়েন কি পড়েন না অথবা বুঝেন কি বুঝেন না এটা তারা ভাল বলতে পারবেন। তদুপরি বিষয়টি তাদের একান্ত ই নিজস্ব ব্যাপার। যে কিতাবগুলাের দলীল আমরা উপস্থাপন করেছি সে গুলাে পড়ে একজন মুকাল্লিদ আলেম তার মাযহাবের ইমাম ও পরবর্তী বিশ্ববিখ্যাত ফকীহগণের ফাতওয়া ভুল ছিল এ কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাবেন তা আমরা মনে করিনা। একটি আমল যুগযুগ ধরে চলে আসছে তাই তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথবা গুটি কয়েক মুরব্বীর অনুকরণ করে কিতাবের ফাতওয়াকে উপেক্ষা করে। তবে ইসলাম যে বাস্তব ও বিজ্ঞান ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা এবং যাবতীয় যুগ জিজ্ঞাসার সমাধান দিতে সক্ষম তা উপলব্ধি করে সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম বিষয়টি বিবেচনা করলেই সমস্যার সহজ সমাধান হবে। বর্তমানে কোন ভাবেই মূল ফাতওয়ার বিপরীত আমল করার সুযােগ নেই। ছয়: যদি প্রশ্ন করা হয়, রেডিও, টিভি, মাইক, টেলিফোন, মোবাইল ইত্যাদির আওয়াজ কি কথকের আওয়াজ, না কি কথকের আওয়াজের প্রতিধ্বনি সে বিষয়ে বিজ্ঞানীগণ আজও এক মত হতে পারেননি। তাই উক্ত মাধ্যম গুলাের সংবাদ শরীয়ত সম্মত হবে কি করে?
জবাবঃ এর জবাবে এতটুকু বলাই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি যে, যে সকল সম্মানিত আলেমগণ বিজ্ঞানীদের মতানৈক্যের অসার যুক্তি দেখিয়ে আধুনিক যান্ত্রিক মিডিয়ার সংবাদকে শরীয়ত সম্মত নয় বলে সস্তা ফাতওয়া জারী করেন। তারা রীতিমত নিজেদেরকেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করছেন। কারণ তাদের নিষিদ্ধ ঘােষিত ঐ সকল যান্ত্রিক মিডিয়া তারা অহরহ ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে আযান একামত, ওয়াজ নসিহত ও সালাত আদায় করেন। মোবাইল ও টেলিফোনের অপর প্রান্তের সকল কথা পুরােপুরি বিশ্বাস নিয়ে তারা জবাব দেন। অথচ তাদের আপত্তি কেবল চাঁদের সংবাদের ক্ষেত্রে । আরাে মজার ব্যাপার হল বাংলাদেশে চাঁদ দেখার সংবাদ প্রশ্ন কারা এ সকল মিডিয়াতেই প্রচার করে থাকেন। সাত: যদি প্রশ্ন করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে চাঁদ দেখার তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশে সাওম ও ঈদ হবে, তাহলে আমরা কেন আরবদেশ গুলাের সঙ্গে একই সময়ে সাহরী ও ইফতারী খাইনা এবং সালাত আদায় করি না?
জবাব: এখানে একটি মৌলিক কথা মনে রাখতে হবে যে, সাওম ফরয হওয়া সালাত ফরয হওয়া এক বিষয় । আর সাওম আদায় করা সালাত আদায় করা এবং সাহরী ও ইফতারী খাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সাওম ফরজ হওয়া, সালাত ফরয হওয়াকে বলে আসবাবে ওযুব বা ওয়াজিব হওয়ার কারণ। পক্ষান্তরে সালাত আদায় করা, সাওম সমাপন করাকে বলে আসবাবে আদা বা সমাপনের কারণ। অর্থাৎ প্রতিটি আমলেরই দুটি দিক রয়েছে। এক: আমলটি ফরয হওয়া, দুই: ফরয হওয়া উক্ত আমলকে কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা । সাওমের ক্ষেত্রেও অনুরূপ । প্রথমত; সাওম ফরয হওয়া, দ্বিতীয়ত; সাওম কি কাজের মাধ্যমে পূর্ণতা দেয়া। প্রথমটি অর্থাৎ সাওম ফরয হওয়া নির্ভর করে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাসের উপস্থিতির উপর । ফলে পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমযান মাস প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল মুমিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে সাওম ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘােষণা হলাে
فمن شهد منكم الشهر فليصمه البقرة : ۱۸۰ ]
অর্থ: "তােমাদের যে কেউ এ (পবিত্র রামাদান) মাস পাবে সেই যেন এ মাসে সাওম রাখার। (সূরা বাকারার:১৮৫) এখন প্রশ্ন হলাে এ ফরয হওয়া সাওম আমরা কিভাবে আদায় করব। যা সাওমের দ্বিতীয় দিক অর্থাৎ সাওমকে কার্যে পরিণত করা যা শুরু হয় সাহরী খাওয়ার মাধ্যমে এবং শেষ হয় ইফতারীর মাধ্যমে। আর এ দ্বিতীয়টি অর্থাৎ সেহরী ও ইফতার এর মাধ্যমে সাওমকে কার্যে পরিণত করা নির্ভর করে সুর্যের পরিভ্রমণের উপর। যে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘােষণা হলো
}وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر ثم أتموا الصيام إلى الليل البقرة : ۱۸۷|
অর্থ: তােমরা পানাহার করাে যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে (পূর্ব আকাশে) ভােরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার হয়। অতপর সাওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। (সূরা
বাকারা ২:১৮৭) অত্র আয়াতের ঘােষণা থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, সাওম কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করার শুরু হচ্ছে সুবহে সাদিক এবং সাওম সমাপ্ত হবে রাতের শুরুতে যা ইফতারীর সময়। সুবহে সাদিক এবং রাত হওয়া অবশ্যই সূর্যের পরিভ্রমণের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। তাহলে উপরােক্ত দু'টি আয়াতের সার কথা এই দাঁড়ালাে যে পৃথিবীর কোথাও চাঁদ উদয় প্রমাণিত হওয়ার সংবাদ গ্রহনযােগ্য মাধ্যমে পাওয়ার সাথে সাথে সকল পৃথিবীবাসীর উপর সাওম ফরয হবে। সাওম বাস্তবায়িত করতে হবে সূর্যের পরিভ্রমণের দ্বারা। তা সূর্যের পরিভ্রমণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই স্থানীয় সময়ানুপাতে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সাহরী, ইফতার ও সালাত আদায় করতে হয়। যেহেতু বাংলাদেশে সূয উদয়-অস্ত মধ্য প্রাচ্যের উদয়-অস্ত সময় থেকে ৩ঘন্টা অগ্রগামী সে কারণেই বাংলাদেশে সাহরী, ইফতার ও সালাতের সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৩ঘন্টা আগে হবে। সুতরাং এব্যাপারে আর কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। মনে করুন রাষ্ট্রীয় ঘােষণা মতে সমগ্র বাংলাদেশ বাসী শুক্রবার ১ রমজানের সাওম রাখলেন । অথচ ঐ দিনই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সেহরির শেষ সময় ও ইফতারের সময় যখন হয়, তার ১৩ মিনিট পরে হবে পঞ্চগড়ের অধিবাসীদের সাহরী ও ইফতারীর সময়। এর কারণ হল সাওম ফরয হয় চাঁদের তারিখের ভিত্তিতে। তাই একই তারিখে সকলে সাওম রাখবে। আর সেহেরি, ইফতার ও সালাতের সময় হয় সূর্যের গতি বিধিতে। ফলে যার যার স্থানীয় সময়ানুযায়ী সাহরী ও ইফতার খাবে এবং সালাত আদায় করবে।
তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়ের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটিও এর প্রমাণ যে সালাতের সম্পর্ক সূর্যের সাথে চন্দ্রের সাথে নয় । হাদীসটি হলাে:
عن ابن عباس قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « أني جبريل عليه السلام عند البيت مرتين فصلي بي الظهر حين زالت الشمس وكانت قدر الشراك وصلى بي العصر حين كان ظله مثلة وصلی بی - يعني المغرب - حين أفطر الصائم وصلي بي العشاء حين غاب الشفق وصلی بي الفجر حين حرم الطعام والشراب على الصائم فلما كان الغد صلي بي الظهر حين كان له مثله وصئی العصر حين كان ظله مثليه صلى بي المغرب حين أفطر الصائم وصلی بی العشاء إلى ثلث ال ليل وصلي بي الفجر فأسفر ثم التفت إلى فقال يا محمد هذا . وقت الأنبياء من قبلك والوقت ما بين هذين الوين»
অর্থ: “ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জিবরাইল (আ:) বাইতুল্লাহর কাছে দুইবার আমার ইমামতি করেছেন । আমাকে নিয়ে যােহরের সালাত আদায় করলাে যখন সূর্য ঢলে গেল এবং (তার ছায়া) জুতার ফিতা বরাবর হলাে। আর আমাকে নিয়ে আছর পড়লেন যখন প্রতিটি জিনিষের ছায়া এক মেছাল পর্যন্ত হলাে। আর মাগরিব পড়লেন যখন সাওম পালনকারীগণ ইফতার করেন (সূর্য ডােবার পরে)। এশার সালাত পড়লেন যখন পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্যের লাল আভা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আর ফজর পড়লেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য খানা-পিনা হারাম হয়ে যায় (অর্থাৎ সুবহে সাদেকের পরে)........... " (আবু দাউদ
৩৯৩) উপরােক্ত হাদীস ও এ সম্পর্কীয় অন্যান্য হাদীস থেকে জানা যায়, ফযরের সালাতের সময় সুবহে সাদেক থেকে শুরু হয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত । যােহরের সময় সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়া থেকে শুরু করে এক মিসাল বা দুই মিসাল পর্যন্ত। আবার আসরের সময় শুরু হয় যােহরের সময় শেষ হওয়া থেকে সূর্য ডােবা পর্যন্ত। সূর্য ডােবার পরে মাগরিব শুরু হয়ে পশ্চিমাকাশের সূর্যের লাল আভা ডুবে যাওয়া পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে মাগরিবের সময় থাকে। মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পরে এশার সালাতের সময় শুরু হয় । বুঝা গেল সালাতের সময়ের সম্পর্ক সূর্যের সাথে আর দিন-তারিখের সম্পর্ক চন্দ্রের সাথে । এই সামান্য বিষয়টি না বুঝার কারণে যখনই বলা হয় সারা বিশ্বের মুসলিম জাতি একই তারিখে ও একই দিবসে সিয়াম, ঈদ ইত্যাদি পালন করবে তখনই একদল তথাকথিত পন্ডিতেরা প্রশ্ন করে বসে, তাহলে আমরা সালাত কেন একই সময়ে আদায় করি না। অথচ তারা এটা চিন্তা করে না যে, সাপ্তাহিক ঈদ অর্থাৎ জুমু'আর সালাত যেভাবে সারা বিশ্বে একই তারিখে ও একই দিবসে আদায় করা হয় ঠিক সেভাবে বাৎসরিক ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও লাইলাতুল কদর, আরাফাত দিবস, আশুরা দিবস সবই সারা বিশ্বে একই তারিখে একই রােজে নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় সময় হিসাবে আদায় করবে। এই সহজ বিষয়টি সহজে বুঝে নিলে আর মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত হতে হবে না। লাইলাতুল কদরের মত গুরুত্বপূর্ণ রাত থেকে বঞ্চিত হতে হবে না । আরাফাত দিবস ও আশুরা দিবসের মত মর্যাদা সম্পন্ন দিবসগুলাে নিয়ে বিভ্রান্ত হতে হবে না। সারা পৃথিবীতে যেভাবে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে জুমু'আর দিন পরিভ্রমন করে ঠিক সেভাবে দুই ঈদের দিন, আরাফাতের দিন, আশুরার দিন ও লাইলাতুল কদর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সারা পৃথিবী পরিভ্রমন
করবে।
মােটকথা: ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ এবং এ মূলনীতি দ্বয়ের ভিত্তিতে রচিত ফিকহ গ্রন্থ সমূহের উল্লেখিত আলােচনার দ্বারা এটাই সুবিধিত যে, পৃথিবীর যে কোন স্থানে নুতন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হবে এবং গ্রহণযােগ্য পন্থায় উক্ত চাঁদ উদয়ের সংবাদ যতদূর পর্যন্ত পৌছবে ততদূর পর্যন্ত মাসের অস্তিত্ব সাব্যস্ত হবে, এবং সকল মুসলিমের উপর ঐদিন থেকে ঐ মাস কেন্দ্রিক যাবতীয় আমল একই দিনে একই তারিখে ফরয হবে। দেশ মহাদেশ ও অঞ্চলের ভিন্নতায় চান্দ্র মাসের তারিখ কখনই ভিন্ন ভিন্ন হবে না। অতএব বিশ্বের যে কোন স্থানে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখাকে চান্দ্র মাসের ১ তারিখ গণ্য করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশে সাওম, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালন করাই শরীয়তের বিধান। এ সংক্রান্ত ফরয ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথ আদায় করা এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রে অত্র শরয়ী সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কোন বিকল্প নেই। বিশ্বে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখার স্থান মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাতে বাংলাদেশে সমন্বয়ের পথ বর্তমানে মুসলিম-অমুসলিম প্রতিটি দেশেই চাঁদ দেখার সংবাদ সংগ্রহের জন্য হেলাল কমিটি অথবা মুসলিম কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বকারী কোন না কোন সংগঠন রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য সকল দেশেই ঐ সকল সংগঠন সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখার স্থান মধ্য প্রাচ্যের সাথে যােগাযােগ রেখে একই দিনে সাওম ঈদ ও চাঁদের তারিখ নির্ভর অন্যান্য ইবাদত সমূহ পালন করছে। অতএব বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি একটু আন্তরিক হয়ে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলাের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করলেই আমাদের দেশেও বিশ্বে সর্ব প্রথম নুতন চাঁদ দেখার তারিখ অনুযায়ী একই দিনে সাওম, ঈদ ও অন্যান্য ইবাদাত পালন করা সম্ভব। এর ফলে দেশের কোটি কোটি মুসলিম নারী-পুরুষ এক বা দুটি ফরয সাওম তরক হওয়া, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম রেখে হারাম নিমজ্জিত হওয়া, তাকবীরে তাশরীক যথা সময়ে শুরু ও শেষ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ রাতের সাওয়াব অর্জনের বঞ্চনা থেকে পরিত্রাণ পাবে । একথা সকলেরই জানা পবিত্র ঈদুল আযহা ও আশুরার ১০ দিন পূর্বেই নুতন চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। পবিত্র রমজানের চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ বাংলাদেশের রাত ১০টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই জানা সম্ভব। তাই প্রথম রাতে তারাবীহ রাত ১১টার সময় আদায় করে সঠিক তারিখে সাওম শুরু করতে এবং সঠিক তারিখ অনুযায়ী অন্যান্য ইবাদাত পালনে কোন সমস্যা নেই। অপর দিকে ঈদুল ফিতরের নুতন চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ, ঈদের আগের রাত ১০টা ৩০মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় বিধায় বিশ্বে সর্ব প্রথম নুতন চাঁদ উদয়ের স্থান মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সঠিক তারিখে ঈদ উদযাপনে কোন সমস্যা নেই । অতএব আমাদের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির উচিৎ ঈমানী, নৈতিক ও দাপ্তরিক দায়িত্ব বােধের পরিচয় দিয়ে প্রতি চান্দ্র মাসের নুতন চাঁদ উদয়ের সংবাদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী দেশব্যাপী চাঁদের তারিখ নির্ভর প্রতিটি ইবাদাত পালনে জাতিকে সহযােগীতা দেওয়া। বর্তমান সমস্যা সমাধানের এটাই সর্বোত্তম সহজ পথ।
আহবান বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলিম নারী-পুরুষকে পবিত্র রমযান মাসের শুরুতে এক বা দুটি ফরজ সাওম ছেড়ে দিয়ে ফরজ তরকের গুনাহে গুনাহগার হওয়া, ঈদ ও কুরবানির দিন সাওম রেখে হারাম নিমজ্জিত হওয়া, আরাফার দিন তাকবীরে তাশরীক শুরু না করে ৫ বা ১০ ওয়াক্তের ওয়াজিব তাকবীর বলা হতে বঞ্চিত হওয়া এবং লাইলাতুল ক্বদর সহ বছরের সকল গুরুত্বপূর্ণ রাতের বিশেষ সওয়াব ও ফাযিলাত অর্জনে বঞ্চিত হওয়া থেকে বাচাঁনাের জন্যে, কুরআন, সুন্নাহ, ফিক্হ এবং ও,আই,সি-এর ইসলামিক ফিকহ একাডেমির ১৯৮৬ সনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বের যে কোন স্থানে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখাকে চান্দ্র মাসের ১ তারিখ গণ্য করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশে সাওম, ঈদ, কুরবানী, তাকবীরে তাশরীকসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের যথাযথ জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে আমরা সকল সম্মানিত মুফতীগণ, ওলামায়ে কিরাম, মসজিদ সমুহের খতীব ও ইমামগণ, বিচারকমন্ডলী, বুদ্ধিজীবী, সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী মহলসহ দেশের সকল পেশাজীবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকর্তা, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সকল সদস্য এবং সরকারের সকল মহলের নিকট বিনীত আহবান জানাচ্ছি।
سبحان الله وبحمده سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا اله الا انت استغفرك واتوب اليك وصلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه أجمعين
২৪ ই' রামাদান ১৪৩৩ হিজরী ১২ই আগষ্ট ২০১২ ইসায়ী
فإن تنازعتم في شيء فردوه إلى الله والرسول إن كنتم ؤمنون بالله واليوم الآخر ذلك خير وأحسن تأويلا
“কোন বিষয়ে যদি তােমরা মতবিরােধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যর্পণ কর যদি তােমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।
(সুরা নিসা ৪:৫৯)
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قل كل أتي يدخلون الجنة إلا من أبي قالوا يا رسول الله ومن يأبی قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبی
আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে অস্বীকার করবে। সাহাবায়ে কিরামগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! কে অস্বীকার করে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যে আমার (তরিকার) অনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার (তরিকার) অনুগত্য করে অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী। (সহীহ বুখারী ৭২৮০)