সাওম, ঈদ, কুরবানী ও চাঁদের তারিখ নিয়ে মালেকী মাযহাবের বক্তব্য | Statement of the Maliki school on the dates of fasting, Eid, Qurbani and the moon

সাওম, ঈদ, কুরবানী ও চাঁদের তারিখ নিয়ে মালেকী মাযহাবের বক্তব্য | Statement of the Maliki school on the dates of fasting, Eid, Qurbani and the moon

(১৯) মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ "মুগনী-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে

فصل : وإذا رأى الهلال أهل بلد لزم جميع البلاد الصوم

অর্থ: “কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্যে সাওম রাখা জরুরী হবে। (আল-মুগনী, খন্ড-৩, পৃঃ-১০)

(২০) মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত গ্রন্থ আলমুনতাকা ফি শারহিল মুয়াত্তার ফতোয়া হলাে:

وإذا رأي أهل البصرة هلال رمضان ، ثم بلغ ذلك أهل الكوفة والمدينة واليمن فالذي رواه ابن القاسم وابن وهب عن مالك في المجموعة لزمهم الصيام أو القضاء إن فات الأداء

অর্থ: "যখন বসরাবাসী রামাদানের নয়া চাদ দেখবে অত:পর তা কুফা, মদিনা ও ইয়ামেনবাসীর কাছে পৌছবে তাহলে ইমাম মালেক (র:) থেকে তার শিষ্যদ্বয় ইবনুল কাসেম ও ইবনু ওয়াহাবের মতে, শেষােক্ত দেশবাসীর প্রতিও সিয়াম রাখা ওয়াজিব হয়ে যাবে আর বিলম্বে খবর পৌছানাের খবরে পেলে কাযা করতে হবে।” (আল মুনতাকা ফি শারহিল মুয়াত্তা খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫২)

আরও কিছু ফিকহের কিতাবের বক্তব্য (২১) চার মাযহাবের সমম্বিত ফিকহ গ্রন্থ “আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবাআ” নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে

إذا ثبت رؤية الهلال بقطر من الأقطار وجب الصوم على سائر الأقطار لا فرق بين

القريب من جهة الثبوت والبعيد إذا بلغهم من طريق موجب ل لصوم . ولا عبرة باختلاف مطلع الهلال مطلقا عند ثلاثة من

1.

অর্থ: "পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা সাওম ফরয হবে। চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই। তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযােগ্য পদ্ধতিতে অন্যের নিকট পৌছাতে হবে। তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে।” (আল ফিকহ আল মাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)

(২২) প্রসিদ্ধ ফিকহ গ্রন্থ “ফিকহুস সুন্নাহ" এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে:

اختلاف المطالع : ذهب الجمهور : إلى أنه لا عبرة باختلاف المطالع . فمتى رأى الهلال أهل بلد ، يجب الصوم على جميع البلاد لقول الرسول صلى الله عليه وسلم " صوموا لرؤيته ، وافطروا لرؤيته " . وهو خطاب عام لجميع الأمة فمن رآه منهم في أي مكان كان ذلك رؤية لهم جميعا . وذهب عكرمة ، والقاسم بن محمد ، وسالم ، وإسحاق ، والصحيح عند الأحناف

অর্থ: “জমহুর ফুকাহা গনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অতএব যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখনই অন্য সকল দেশে সাওম ফরয হয়ে যাবে । কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন “চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তােমরা সাওম রাখ এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তােমরা সাওম ছাড়, ঈদ কর। এখানে তােমরা বলে সম্বােধন দেশ মহাদেশ নির্বিশেষে সকল উম্মতের জন্য ব্যাপক অর্থবােধক। অতএব উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন স্থান থেকে চাঁদ দেখুক উক্ত দেখাই সকল উম্মতের জন্য দলীল হবে। এ মত পােষণ করেছেন হযরত ইকরামা, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, সালেম এবং ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। হানাফী ফকীহগণের এটাই বিশুদ্ধমতে ।" (আল-ফিকহুস সুন্নাহ, খণ্ড:২, পৃ:৭)

(২৩) তামামূল মিন্নাহ গ্রন্থে আল্লামা আলবানী (র:) ইবনে তাইমিয়া (র:) এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন:

يشمل كل من بلغة رؤية الهلال من أي بلد أو إقليم من غير تحديد مسافة أصلا كما قال ابن تيمية في " الفتاوى "

অর্থ: “নব চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ যতটুকু পৌছবে ততটুকু তার আওতাভূক্ত হবে। তা কিছুতেই দূরত্বের কারণে কোন দেশ, মহাদেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না। (তামামূল মিন্নাহ ১/৩৯৮) উপরে উল্লেখিত মতামত গুলােকে সন্দেহাতীত ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন কুরআনের এই বাণী

}يسألونك عن الأهلة قل هي مواقيت للناس والحج { البقرة : ۱۸۹]

অথ: “হে রাসূলুল্লাহ (সা:)! মানুষ আপনাকে নুতন চাঁদ সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন এগুলাে মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় নির্ধারণকারী। (সুরা বাকারা ২:১৮৯) আয়াতে উল্লেখিত এ শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আরবী ব্যাকরণে পারদর্শী সকল ব্যক্তি একথা ভালভাবে জানেন যে, টি ইস্তিগফার কী। যা শব্দের মধ্যকার । (মানুষ) নামের সকলকেই সন্নিবেশিত করে।

তাহলে আয়াতের অর্থ হবে নুতন চাঁদ সকল মানুষের জন্য সময় নির্ধারক। পৃথিবীর কোথাও যখন নুতন চাঁদ উঠে তখন কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী ঐ নুতন চাঁদ উপমহাদেশের অধিবাসীদের জন্যেও সময় নির্ধারক। কারণ বিশ্বে নুতন চাঁদ উদয়ের দিনে বাংলাদেশের অধিবাসীগণ অন্য গ্রহের অচেনা প্রাণীতে পরিণত হয়না বরং মানুষই থাকেন। তাহলে পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষ হিসেবে বাংলাদেশীদেরকেও ঐ চাঁদের তারিখ অনুযায়ী আমল করতে হবে। এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ১৪৩৩ বত্সরের ইতিহাসে অত্র মাসআলার উপরে কুরআন, সুন্নাহ এবং ফিকহের ইজমা বা ঐক্যমত থাকা সত্বেও তাৎক্ষনিক সংবাদ দেওয়া-নেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা পারিপার্শিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যতদূর পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততদুর এলাকায় আমল করেছেন। তাদের এ আমল সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ছহীহ ও যুক্তিপূর্ণ ছিল। অপর দিকে বর্তমানে সে ওজর বা সমস্যা না থাকায় এবং তাৎক্ষনিক সংবাদ দেয়া-নেয়ার ব্যবস্থা থাকায় আমাদেরকে অবশ্যই মূল মাসআলা অনুযায়ী আমল করতে হবে। এটাই ফিকহের সিদ্ধান্ত এবং বিবেক ও সময়ের দাবী। কুরআন, হাদীস ও সম্মানিত ফকীহগণের সম্মিলিত ফাতওয়া সম্পর্কে উপমহাদেশের যুগ বরেণ্য আলেমগণের সিদ্ধান্তও এটি এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ১৪৩৩ বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে যত ফিকহ গ্রন্থ রচিত হয়েছে সকল গ্রন্থেই অত্র মাসআলার ক্ষেত্রে একই রকম সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফাতাওয়ার কলেবর বৃদ্ধি এবং পাঠকগণের ধৈর্যচ্যুতি আশঙ্কা উদ্ধৃতি উল্লেখ সংক্ষেপ করে শুধু প্রধান প্রধান গ্রন্থগুলাের বর্ননাসূত্র নিমে

উল্লেখ করা হল (২৪) বাজ্জাজিয়া, খন্ড-৪, পৃঃ-৯৫ (২৫) (২৬) (২৭) (২৮) (২৯) (৩০) তাতারখানিয়া, খন্ড-১, পৃঃ-৩৬৯ নুরুল ইযাহ, পৃঃ-১২৭ বজলুল মাযহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ, খন্ড-১১, পৃঃ-১০৭ আল-ফাতওয়া আল-ওয়াহেদা, শহীদ সদর, খন্ড-১, পৃঃ-৬২০ তাহযীবুল আহকাম, ফয়েজ কাশানী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৭ ছালছাবিল, খন্ড-১, পৃঃ-২০২

(৩১) (৩২) (৩৩) (৩৪) ইমদাদুল মুফতি, পৃঃ-৫৫ ফতহুল মুলহেম, খণ্ড-৩, পৃঃ-১১৩ আনওয়ারুল মাহমুদ, খন্ড-২, পৃঃ-৭১ আয়াতুল্লাহ খুয়ী মুসনাদুল উরওয়া, খন্ড-২, পৃঃ-১২২ (৩৫) ফতোয়া-ই-আজিজিয়া, খণ্ড-৩, পৃঃ-৪৯ (দারুল উলুম দেওবন্দ) (৩৬) তাফসীরে মাজেদী, পৃঃ-১০৭ (৩৭) মারাকীউল ফালাহ, পৃঃ-২০৭ (৩৮) মাজমু ফতোয়া, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৮১ (৩৯) জরুরী মাসায়েল, মাওলানা রুহুল আমীন বর্ধমানী, খণ্ড-১, পৃঃ-১৪ (৪০) জামেউর রুমু, পৃঃ-১৫৬ (৪১) (৪২) নাহরুল ফায়েক মজমুআয়ে ফতোয়া, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৬৯ তাহতাবী, পৃঃ-৫৪০ (৪৩) কিতাবুল মাবসুত, আল্লামা ছারাখছী, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৩৯।

Previous
Next Post »