![]() |
الخييلي : ما يؤثر في الأبصار والانظار ترى الشيء على خلاف ما هو عليه
অর্থাৎ যে জাদু চোখ এবং দৃষ্টিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে কোনাে বস্তুকে বাস্তবতার বিপরীত দেখে। ফেরাউনের জাদুকররা মুসা। (আ.)-এর সাথে এই প্রকারের জাদুই করেছিল । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
হচ্ছে
فإذا حبالهم وعصيهم يخيل إليه من سخرهم آلها تسعی
অতঃপর তাদের জাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হলাে যেন তাদের রশি ও লাঠিগুলাে ছুটোছুটি করছে । (ত্বহা, ২০:৬৬) এমনিভাবে সুরা আ'রাফে বলা হয়েছে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন
فلما ألقوا سحروا أعين الناس واسترهبوهم وجاءوا بسحر عظيم
যখন তারা নিজেদের জাদু ছাড়লাে, তখন তা দ্বারা লােকদের দৃষ্টিকে জাদু করলাে এবং তাদের আতঙ্কিত করে তুললে। (আরাফ : ১১৬) এখানে আল্লাহ তা'আলা ~ (মানুষকে জাদু করলাে) না বলে (মানুষের চোখে জাদু করেছে) বলেছেন এখানে একথা বলা হচ্ছে যে, এ প্রভাব সাধারণ লােকদের ওপর পড়েনি, মূসা (আ.)-ও জাদু দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার চোখই কেবল এটা অনুভব করেনি বরং তাঁর মস্তিষ্কও অনুভব করছিল যে, লাঠি ও রশিগুলাে সাপ হয়ে দৌড়াচ্ছে। এবং হাঠাৎই তার চোখ ভেসে উঠেছে যেন শত শত সাপ কিল বিল করতে করতে তার দিকে দৌড়ে চলে আসছে। এ দৃশ্য দেখে মূসা (আ.) তাৎক্ষণিকভাবে নিজের মধ্যে যদি একটি আশঙ্কার ভাব
অনুভব করে থাকেন তাহলে এটা কোনাে অবাক হবার কথা নয়। মানুষ তাে সর্বাবস্থায় একজন মানুষই। একজন নবী নবী হলেও মানবিক আবেগ অনুভূতি এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদা থেকে তিনি কখনােই মুক্ত নন। তাছাড়া এ সময় মুসা (আ.) স্বাভাবিকভাবে এ আশঙ্কা করে থাকতে পারেন যে, মুজ্যিার সাথে এতটা সাদৃশ্যপূর্ণ দৃশ্য দেখে জনসাধারণ নিশ্চয়ই বিভ্রাটে পড়ে যাবে এবং তাদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। একটি কথা উল্লেখ্য, কুরআন এখানে এ কথার সত্যতা প্রমাণ করছে যে, নবী ও জাদু দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। যদিও জাদুকর তার নবুওয়াত কেড়ে নেবার অথবা তাঁর প্রতি নাযিলকৃত ওহীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কিংবা জাদুর প্রভাবে তাকে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা রাখে না, তবুও মােটামুটিভাবে কিছুক্ষণের জন্য তার স্নায়ুর ওপর এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এ থেকে হাদীসগ্রন্থগুলােতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জাদু করার ঘটনাটি পাঠ করে শুধুমাত্র এ রেওয়ায়াতগুলােকে মিথ্যা বলেই ক্ষান্ত হন না বরং আরাে সামনে অগ্রসর হয়ে সমগ্র হাদীস শাস্ত্রকেই অনির্ভরযােগ্য গণ্য করে, তাদের চিন্তাধারার
গলদা ও সামনে এসে যাবে।
জাদু টোনা, জ্বিনের আসর বদনযর ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় পৃথিবীতে আল্লাহর প্রচলিত নিয়ম-নীতির প্রতি কেউ গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবে যে, বিপদ-মুসীবত আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি অবধারিত নীতি। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন
ولنبلونكم بشيء من الخوف والجوع ونقص من الأموال والأنفس والثمرات وبشر الصابرين
আমি তােমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়-ভীতি ও ক্ষুধা-অভাব দিয়ে আরাে পরীক্ষা করব সম্পদ, জান ও ফসলের ঘাটতি করে। এসকল ক্ষেত্রে যারা ধৈর্য ধারণ করে আপনি তাদের সুসংবাদ প্রদান করুন। (বাক্বারা ২:১৫৫) যারা মনে করে যে নেক লােকদের কোনাে বিপদ নেই, তাদের ধারণা ভুল; বরং বিপদ-মুসীবতই হচ্ছে ঈমানের পরিচয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলাে কোনাে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হয়? তিনি
বললেন
عن سعد قال سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم أي الناس أشد بلاء فقال الأنبياء ثم الأمقل فالأمثل قتلى الرجل على حسب دينه فإن كان رقيق الدين ابتلي على حسب ذاك وإن كان صلب الذين ابتلي على حسب ذاك قال ما تزال البايا بالرجل حتى يمشي في الأرض وما عليه خطيئة
সা'আদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত কে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নবীগণ, তারপর তাদের নিকটবর্তী। ধর্মের দৃঢ়তা অনুযায়ী মানুষকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ধর্মীয় দিক থেকে যদি দুর্বল হয় তাহলে তাকে সে অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয় । আর যদি ধর্মীয় দিক থেকে শক্ত থাকে তাহলে তাকে সে অনুযায়ী কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। এভাবে বিপদ-আপদ, বালা মুসিবত তার সঙ্গে লেগেই থাকে। একপর্যায়ে সে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ অবস্থায় জমীনে চলাচল করে। (তিরমিযী ২৩৯৮, মুসনাদে আহমাদ ১৪৮১, ১৪৯৪, ১৫৫৫, ১৬০৭, বায়হাকী ৬৭৭২) বিপদাপদ হচ্ছে বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার একটি অন্যতম আলামত । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন عن أنس بن مالك ، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، أنه قال : إن أعظم الجزاء مع عظم البلاء ، وإن ال لة إذا أحب قوما ابتلاهم ، فمن رضي فله الرضا ، ومن سخط فله السخط
আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই বড় পুরস্কার বড় বিপদের সাথে সম্পৃক্ত। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যখন কোনাে জাতীকে ভালােবাসেন তখন তাদের বিপদে আক্রান্ত করেন। তখন যারা সন্তুষ্ট থাকে তাদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি আর যারা অসম্ভুষ্ট হয় তাদের প্রতি আল্লাহর অসম্ভুষ্টি অবধারিত হয়। (তিরমিযী ২৩৯৬, বায়হাকী ৭২১, ইবনে মাজাহ ১৩৩৮) এ ছাড়া বিপদাপদ হলাে বান্দার প্রতি আল্লাহর কল্যাণের একটি অন্যতম পরিচয় । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
إذا أراد ال له بعبده الخير عجل له العقوبة في الدنيا وإذا أراد بعبده الشر أمسك عنة
بذنبه حتى يوافي به يوم القيامة
আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন দুনিয়াতে ত্বরিত তার শাস্তির ব্যবস্থা করেন। আর আল্লাহ যখন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন গুনাহ করার পরও তাকে শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর সেই শাস্তি কিয়ামত দিবসে পূর্ণরূপে দান করবেন। (তিরমিযী ২৩৯৬, মেশকাত ১৫৬৫) বিপদ-মুসিবত সামান্য হলেও তা গুনাহ মাফ হওয়ার অন্যতম মাধ্যম । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
عن عبد ال له قال دخلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يوعك فقلت یا رسول الله إنك لتوعك وغا شديدا قال أجل إني أوعك كما يوعك رجلان منم قلت ذلك أن لك أجرين قال أجل ذلك كذلك ما من مسلم يصيبه أذى شوكة فما
فوقها إلا كفر ال له بها سيئاته كما تحط الشجرة ورقها
আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি তাে প্রচণ্ডভাবে জ্বরে আক্রান্ত । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, তােমাদের মধ্যে দুজন ব্যক্তি যে পরিমাণ জ্বরে আক্রান্ত হয় আমি একা সে পরিমাণ জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম এটা এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, বিষয়টি এরকমই। যেকোনাে মুসলিম কোনাে কষ্টে আক্রান্ত হয়, এমনকি একটি কাটা বা তার চেয়েও ছােট কোনাে আঘাত প্রাপ্ত হয় তবে তার দ্বারা তার গুনাহ্ সমূহ ঝড়ে যায়, যেভাবে গাছের পাতা ঝড়ে যায়। (বুখারী ৫৬৪৮, ৫৬৬০ ৫৬৬৭ মুসলিম ৬৭২৪ মুসনাদে আহমাদ ৪৩৪৬) বিপদগ্রস্ত মুসলিম ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তবে তার বিপদ পূর্বকৃত পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ হয়ে যায় । অথবা তা দ্বারা তার মর্যাদা উন্নীত হয়। কিন্তু সে যদি গুনাহগার হয় তবে বিপদাপদ তার পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ হয় এবং পাপের ভয়াবহতার কথা তাকে স্মরণ করানাের জন্য হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন
ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بغض الذي عملوا اللهم يرجعون
'জলে-স্থলে যে সকল বিপদ-বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে তা মানুষের কৃতকর্মের জন্যই। যাতে করে তার মাধ্যমে তাদের কর্মের কিছুটা শাস্তি প্রদান করা হয়। যাতে করে তারা সৎ পথে ফিরে আসে। (রূম, ৩০:৪১) ইমাম ইবনুল ক্াইয়িম (রহ.) বলেন, বান্দার যখন সকাল ও সন্ধ্যা হয় এমতাবস্থায় যে, এক আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোনাে লক্ষ্য থাকে না, তখন আল্লাহ তার সকল প্রয়ােজন মিটানাের দায়িত্ব বহন করেন। তাঁর সকল বিষন্নতা দূর করে দেন। আর আল্লাহর ভালোবাসার জন্য তার অন্তরকে, তাঁর যিকিরের জন্য জিহ্বাকে ও তার অনুসরণের জন্য তার অঙ্গ-প্রতঙ্গকে মুক্ত করে দেন। আর যখন বান্দার সকাল ও সন্ধ্যা হয় এমতাবস্থায় যে, দুনিয়াই তার লক্ষ্য, তখন আল্লাহ তার ওপর দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনা ব্যস্ততা চাপিয়ে দেন। আর তাকে তার নিজের ওপর নির্ভরশীল করেন। অতঃপর তার অন্তরকে আল্লাহর ভালোবাসার পরিবর্তে সৃষ্টির ভালােবাসা দ্বারা, তার জিহ্বা আল্লাহর যিকিরের পরিবর্তে তাদের স্মরণ দ্বারা ও তার সকল অঙ্গকে আল্লাহর অনুসরণ করার পরিবর্তে তাদের সেবা ও কাজ দ্বারা ব্যস্ত করে দেন। অতঃপর সে বন্য পশুর মতাে অন্যের সেবায় পরিশ্রম করে। কামারের হাপরের মতো যা ভিতরে বাতাস ভরে এবং তা অন্যের উপকারের জন্য চিপিয়ে বের করে। (তাতে নিজের কোনাে উপকার হয় না) অতএব যেসব লােক আল্লাহর ইবাদত, তাঁর অনুসরণ ও তাঁর ভালােবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে সৃষ্টির ইবাদত (দাসত্ব) ও তাদের ভালােবাসা দ্বারা পরীক্ষায় লিপ্ত করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন
ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطانا فهو له قرين
'আর যে পরম করুণাময়ের যিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়ােজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। (যুখরূফ ৪৩:৩৬) বিপদ-মুসিবতের প্রকারভেদ :
বিপদ-আপদ দুপ্রকার । কল্যাণের বিপদ। যেমন ধন-সম্পদের প্রবৃদ্ধি । অকল্যাণের বিপদ। যেমন, ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্রতা, জান-মালের ক্ষতি ইত্যাদি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, আমি তাদের কল্যাণ ও অকল্যাণের ফিতনায় ফেলে পরীক্ষা করে থাকি । (আম্বিয়া ২১:৩৫)।
আজকে এতটুকুই। ধন্যবাদ সবাইকে।
আজকে এতটুকুই। ধন্যবাদ সবাইকে।