ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বা মতবাদ বাতিল | All the religions or doctrines without Islam without canceling


ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বা মতবাদ বাতিল | All the religions or doctrines without Islam without canceling

বর্তমানে কিছু আধুনিক শিক্ষিত এবং তথাকথিত পীরদেরকে বলতে শুনা যায় যে, “পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জর“রী নয়”যেমন ‘আল্লাহ কোন পথে?’ নামক বইয়ের ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে, পৃঃ ১১৩-১১৪১২৫-১২৬ এবং ‘মাইজভান্ডারীর জীবনী ও কেরামত’ নামক বইয়ের পঞ্চদশ প্রকাশঃ জুলাই -২০০২, পৃষ্ঠাঃ ১৫১- ১৫২ তে বলা হয়েছে পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আবশ্যকতা আছে বলে মনে করি না। বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যে কোন ধর্মের লোক নিজ নিজ ধর্মে থেকে সাধনা করে মুক্তি পেতে পারে। তাদের এই কথিত ‘তাওহীদে আদইয়ান বা সকল ধর্মের ঐক্য’ এর স্বপক্ষে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করে থাকেঃ
অর্থ: “যারা মু’মিন, যারা ইয়াহুদী, এবং খৃষ্টান ও সাবিঈন- (এদের মধ্যে)
যারাই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য
তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং
তারা দুঃখিত হবে না।” (সূরা বাকারা, ২ঃ ৬২)

অথচ এ আয়াতে যে কোন ধর্মের লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ঈমান আনলে এবং নেক কাজ করলে তারা পরকালে মুক্তি পাবে। আর একথা স্পষ্ট যে, ইসলাম ধর্ম আগমনের পর রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম কে আখেরী নবী না মানলে তার ঈমান পূর্ণ হবে না। আর রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম কে আখেরী নবী মানলে অন্যান্য সব ধর্মের বিধানকে রহিত মানতে হয়। তাহলে অন্য কোন ধর্মে থেকে মুক্তির অবকাশ রইল কোথায়? কুরআনে আল­াহ তা‘আলা
ইরশাদ করেনঃ
অর্থ: “যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত। (আল ইমরান : ৮৫)
অর্থ: “তারা কি আল­াহ্র দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে?
আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচছায় হোক বা অনিচছায় হোক,
তাঁরই অনুগত হবে এবং তার দিকেই ফিরে যাবে। (আল ইমরান : ৮৩)
অমুসলিমরা ইসলাম না গ্রহণ করে যত ভাল কাজই কর“ক না কেন,
পরকালে তারা মুক্তি পাবে না। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে:
অর্থঃ “যারা কাফের, তাদের আমলসমূহ মর“ভূমির মরীচিকা সমতুল্য,
যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। কিন্তু সে যখন তার কাছে যায়,
তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অত:পর আল­াহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল­াহ দ্র“ত হিসাব গ্রহণকারী। অথবা (তাদের আমলসমূহ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে
একেবারেই দেখতে পায় না। আল­াহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন
জ্যোতি নেই।” (সূরা আন-নূর, ২৪ ঃ ৩৯-৪০)

এর জ্বলন্ত প্রমাণ আবু তালেব। আল­াহর রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম- এর আপন চাচা। হযরত আলী (রাঃ) এর আব্বাজান। যিনি সারা জীবন রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম কে ভাতিজা হিসাবে দেখা- শুনা করেছেন, সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন। এমনকি তিন বৎসর পর্যন্ত অবর“দ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর পরেও তার জন্য দোয়া করতে থাকলেন, ফলে আল­াহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করে দিলেন:
অর্থঃ “নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে,
যদিও তারা আত্নীয় হোক একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী।
(তাওবা, ৯ঃ ১১৩) আরো বলা হলোঃ

অর্থঃ “আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না,
তবে আল্লাহ্ তা'আলাই যাকে ইচছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন। (কাসাস, ২৮ঃ ৫৬)

এ বিষয়টি হাদীস শরীফে আরো স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছেঃ
অর্থঃ “হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত উমর (রাঃ) একবার
মহানবী সা. এর কাছে এসে বললেনঃ (ইয়া রাসূলাল­াহ) আমরা ইহুদীদের কাছে এমন কিছু কথা-বাতার্ শুনতে পায়, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে, আমরা তাদের (তাওরাতের) কিছু কথা লিখে রাখবো? আল­াহর রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বললেনঃ তোমরা কি বিভ্রান্তির মধ্যে আছো?! যেমনিভাবে বিভ্রান্তিতে আছে ইয়াহুদী এবং খৃষ্টানরা। নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার (একটি দ্বীন), যদি হযরত মুসা (আঃ) (তাওরাত যার উপর নাজিল হয়েছে) তিনি জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না।
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “উমার ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ) রাসূলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তাওরাত লিখিত একখন্ড কাগজ নিয়ে আসলেন। অতঃপর বললেনঃ ইয়া রাসূলুল­াহ! এটা তাওরাতের থেকে লিখিত একখন্ড বাণী। অতপরঃ রাসূলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম চুপ থাকলেন এবং উমার (রাঃ) তা পড়তে আরম্ভ করলেন, তার পড়া শুনে রাসূলূল­াহ এর চেহারা পরিবর্তন হতে লাগল। অতপরঃ আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হে ওমর! তুমি সড়ে যাও (চুপ হয়ে যাও), তুমি কি রাসুলুল­াহ সাল­াল­াম এর চেহারার অবস্থা দেখতে পাচ্ছনা? অতপরঃ উমার (রাঃ) রাসূলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম এর চেহারার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ আমি আল­াহর কাছে আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি থেকে পানাহ চাচ্ছি। তিনি আরো বললেনঃ
আমরা আল­াহকে রাব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ
সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। অতপরঃ রাসূল সাল­াল­াহু সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! যদি তোমরা মুসা (আঃ) কে পেতে অতপরঃ তার অনুসরণ করতে ও আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে সঠিক পথ বা দ্বীন থেকে দুরে চলে যেতে (পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে)। যেনে রাখ! যদি মুসা (আঃ) ও জীবিত থাকত এবং আমাকে পেত; তবে আমার অনুসরণ করতো। (দারেমী, মেশকাত বা: এ’তেছাম)

জুমার বয়ান। তারিখ : ২৮-০৮-২০০৯
স্থান : হাতেম বাগ জামে মসজিদ, ধানমন্ডি ঢাকা।

Previous
Next Post »