সকল নবীর দ্বীন ও উম্মতের পরিচয় কি ছিল ? What was the identity of the religion and ummah of all the prophets ?


সকল নবীর দ্বীন ও উম্মতের পরিচয় কি ছিল  ? What was the identity of the religion and ummah of all the prophets  ?

সকল নবীর মূল দাওয়াত এবং আক্বীদাগত বিষয় এক হলেও তাদের
শরীয়ত ও শাখাগত বিষয়ে কিছুটা ভিন্নতা ছিলো। তাই এখানে প্রথমে
সকল নবীর এক তাওহীদ ও ইসলামের ব্যাপারে কিছু দলীল পেশ করে তারপর তাদের শরীয়ত ভিন্ন হওয়া নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
অর্থ: “ইব্রাহীম না ছিলেন ইয়াহুদ আর না ছিলেন নাসারা (খৃষ্ঠান)। বরং সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আল­াহর একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন তিনি। (আল ইমরান, ৩ঃ ৬৭)

অর্থ: “অতপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত পৌঁছে
তাহলে যে আমার হেদায়াত মেনে চলবে তার জন্য চিন্তার কোন কারণ
থাকবে না এবং সে আশংকিত ও ব্যথিত হবে না। যে হেদায়েত অস্বীকার
করবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিবে সে হবে দোযখের অধিবাসী। (সূরা বাকারা, ২ঃ ৩৮, ৩৯)

অর্থ: “এমন কোন জাতি ছিল না যাদের কাছে কোন সাবধানকারী (নবী)
আসেনি।” (সূরা ফাতের, ৩৫ঃ ২৪)

উপরের এ দুটি আয়াত একথারই সুস্পষ্ট ঘোষণা করে যে, এ দুনিয়ার
মানুষের বসবাস এবং শরীয়তের আহকাম একত্রেই শুর“ হয়েছে। সেই
আদিকাল থেকে মানবজগত কখনো ‘দ্বীন’ ও ‘শরীয়ত’ শূন্য হয়ে পড়েনি।
এমন জাতি নেই যে, আল্লাহ তা‘আলার হেদায়েত থেকে বঞ্চিত ও
অনবহিত রয়েছে। এটা এ জন্য যে, মানুষ স্বাধীন এখতিয়ার সম্পন্ন সৃষ্টি।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তার বংশধর হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত
ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ) প্রমুখ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
অর্থ: “স্মরণ কর, সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীমকে তাঁর প্রভু বলেছিলেন ‘মুসলিম হও অথার্ৎ আমার অনুগত হয়ে যাও।” তখন তার জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘আমি জগতসমূহের প্রভুর মুসলিম অথার্ৎ অনুগত হয়ে গেলাম। অতঃপর এ বিষয়ে অসিয়ত করলেন ইব্রাহীম তার পুত্রদেরকে এই বলে, হে আমার সন্তানগণ! আল­াহ তোমাদের জন্য এই বিশেষ দ্বীনটি পছন্দ করেছেন। অতএব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমরা মুসলিম হয়ে থেকো।” (বাকারা : ১৩১-১৩৩)

কোরআন পাকে এ ধরনের বিশ্লেষণ হয়রত লূত (আঃ), হযরত মূসা
(আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রমুখ নবীগণের
সম্পর্কেও দেয়া হয়েছে। অতপর সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, তাঁরা এবং
তাদের অনুসারীগণ সকলেই ছিলেন ‘মুসলিম’ এবং সকলেরই দ্বীন ছিল
ইসলাম। তবে শরীয়তের ক্ষেত্রে একেক নবীর শরীয়ত অন্য নবীর শরীয়ত থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিলো। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
অর্থঃ “সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা কর“ন আল­াহ যা নাযিল
করেছে তদনুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের
খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য
নির্ধারণ করে দিয়েছি নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা। আর যদি আল­াহ্
চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সাইকে এক জাতি করে দিতেন।
কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন
তার মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের
সবাইকে আল­াহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয়ে যাতে তোমরা মতভেদ করতে। (সূরা মায়িদাহ ৫ঃ ৪৮) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

অর্থঃ “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদতের
নিয়ম পদ্ধতি, যা তারা পালন কের। সুতরাং তারা যেন আপনার সাথে এ
ব্যাপারে বিতর্ক না করে। আপনি আপনার রবের দিকে আহবান করতে
থাকুন। নিঃসন্দেহে আপনি তো আছেন সরল-সঠিক পথে। (সূরা হজ্জ:
৬৭) আরো ইরশাদ হয়েছে,

অর্থঃ “এরপর আমি আপনার জন্য একটি শরীয়ত প্রণালী নির্ধারণ করে
দিয়েছি। সুতরাং আপনি আপনার প্রতি দেয়া শরীয়তেরই অনুসরণ করতে থাকুন এবং এর বাইরে অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।” (সূরা জাসিয়াত, আয়াত : ১৮)

ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন
ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন। ইসলাম ছাড়া আর কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রমাণ হলো আল­াহ পাক তাঁর কিতাব কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেনঃ
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীম দ্বীন হলো ইসলাম।’ (আল ইমরান, ৩ঃ ১৯)
অর্থঃ “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (আল ইমরান, ৩ঃ ৮৫)

ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা
ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। আল­াহ পাক কুরআন মাজীদে
এরশাদ করেনঃ

অর্থঃ “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম। আমার
নেয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণতা দিলাম আর তোমাদের জন্য
ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (মায়েদা, ৫ঃ ৩)

সুতরাং যে দ্বীনকে আল­াহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের মাধ্যমে যে দ্বীনকে
পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন তার ভিতরে নতুন কিছু সংযোজন করার অধিকার কারও নেই। যদি করা হয় তা হবে বিদআ’ত। আর বিদআ’তের ব্যাপারে রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন,
বিদআ’ত সবই গোমরাহী। এ কারণেই হযরত ইমাম মালেক (রহঃ)
বলেছেনঃ অর্থঃ “যে ব্যক্তি কোন বিদআ’ত আবিস্কার করে আবার সেটাকে বিদআ’তে হাসানাহ বা ভালো বিদআ’ত মনে করে সে যেনো দাবী করলো যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিসালাতের ভিতরে খিয়ানত করেছেন, কেননা আল­াহ তা‘আলা বলেছেনঃ
“আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।
সুতরাং যে সব কাজ তখন দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত ছিল না তা বর্তমানেও দ্বীন
নয়। পূণার্ঙ্গ দ্বীনকে পূণার্ঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে
পূণার্ঙ্গ দ্বীনকে পূণার্ঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং কিছু মানবো কিছু
মানবো না, এমন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না।
অর্থ: “হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা, ২ঃ ২০৮)
অর্থ: “এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে,
হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত
করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।
(বাকারা, ২ঃ ১৩২)

অর্থ: “তবে কি তোমরা কুরআনের কিছু মানবে আর কিছু মানবে না? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (বাকারা, ২ঃ ৮৫)

অর্থঃ “যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি
আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে,
আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তূ কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই
মধ্যবতর্ী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য
প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে
রেখেছি অপমানজনক আযাব।” (নিসা : ১৫০-১৫১)
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

Previous
Next Post »