ইসলামে সার্বভৌম ক্ষমতার অর্থ কী? | What is the meaning of sovereign power in Islam?



সার্বভৌম ক্ষমতার অর্থ কী?

রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগণ সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা বলেছেন তা নিম্নরূপÑ
ক. অষ্টিনের মতে, “চুড়ান্ত” “চরম” “অসীম” “অবাধ”
“অবিভাজ্য” “হস্তান্তর যোগ্যহীন” “শাস্তি প্রয়োগে পূর্ণ
ক্ষমতাবান” এরূপ ক্ষমতা।
খ. গ্রাটিয়াসের মতে, সার্বভৌম হল, “চূড়ান্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা।”
গ. বার্জেসের মতে “মৌলিক” “চরম” ও “অসীম” ক্ষমতা।
ঘ. টমাস হবস-এর মতে, “চরম” “অবিভাজ্য” “হস্তান্তরবিহীন”
ক্ষমতা।
ঙ. র“শোর মতে, “চরম” “অবিভাজ্য” “হস্তান্তরযোগ্যহীন”
“ঐক্যবদ্ধ” “স্থায়ী” ক্ষমতা।
চ. জাঁ-বোদার মতে, “সার্বভৌম ক্ষমতা “চূড়ান্ত” ও ‘চিরন্তন’
ক্ষমতা, কোনভাবেই আইনের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।

এরূপ সার্বভৌম ক্ষমতা “বাস্তবেই আছে কিনা, থাকলে এই ক্ষমতা
কার বা কিসের, সেই তর্কে না গিয়েও আপাততঃ এ কথা অধিকতর
যুক্তিসঙ্গতভাবে বলা সম্ভব যে, “সার্বজনীন, দেশ-কাল-বর্ণ নিরপেক্ষ
সকলের সকল স্থানের সকল মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সহজাত
কল্যাণমুখী গুণাবলীর ক্রমাগত বিকাশ সাধনের আইন কেবল উলি­খিত
গুণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কিংবা তার চাইতে উচ্চতর ও মহান গুণাবলী
সংবলিত সার্বভৌম ক্ষমতার পক্ষেই সম্ভব।
সার্বভৌমত্বের কমান্ড বা আদেশই হচ্ছে আইন
বিরাট সংখ্যক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কিংবা স্বরূপ চিহ্নিত করতে বলেছেন, “সার্বভৌম-এর আদেশই আইন” (অষ্টিন);
“সার্বভৌমত্বের দায়িত্ব হল আইন প্রণয়ন করা” (জ্যাঁ বোদা)। বস্তুতঃ
সহজাত বিবেকের রায়ও তাই যে, আইনকে নিরপেক্ষ হতে হলে ব্যক্তি,
গোষ্ঠি, বর্ণ, স্থান, কাল-এর উর্ধ্বে উঠতে হলে; দুটি শর্ত পূরণ প্রয়োজন।
প্রথমতঃ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা বা সত্তা এবং আইন পালনকারী বা
অনুসারী বলে দুটি ভিন্ন গোষ্ঠির ধারণা।
দ্বিতীয়তঃ আইন পালনকারী সংস্থা বা সত্তার চাইতে আইন প্রণয়নকারী
সংস্থা বা সত্তার শ্রেষ্ঠত্ব সবদিক দিয়ে প্রমাণিত হতে হবে।
আইন প্রণয়নকারী এবং আইন পালনকারী যদি একই মযার্দার একই
ক্ষমতার ধরে নেয়া হয় তাহলে যারা প্রণয়ন করবে তারা তাদের স্বার্থের
উর্ধ্বে উঠতে অপারগ হতে বাধ্য। অপরদিকে সকলে মিলে একত্রে
সকলের সমান স্বার্থ সংরক্ষণ করে কোথাও কোন আইন প্রণয়ন প্রায়
অবাস্তব ধারণার শামিল। এমতাবস্থায় যুক্তির খাতিরে অপেক্ষাকৃত
ক্ষমতাধর, অপেক্ষাকৃত মযার্দাবান, অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ আইন প্রণয়নকারী
সংস্থার বিমূর্ত ধারণাই হল সার্বভৌমত্বের ধারণা। এরূপ ধারণার প্রেক্ষিতে
সার্বভৌমের আদেশই আইন বা সার্বভৌমের দায়িত্ব হল আইন প্রণয়ন।
সার্বভৌম ক্ষমতার গুণাবলী কেবলমাত্র আল­াহ তা’আলার মধ্যেই পাওয়া যায়
আমাদের বিবেচনায় উলি­খিত আইন-প্রণয়নে সক্ষম হওয়ার জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার আরও কিছু অত্যাবশ্যকীয় গুণের দরকার। যেমনঃ

ক. সেই “সার্বভৌম ক্ষমতাকে” অবশ্যই “সর্বজ্ঞ” হতে হবে। অথার্ৎ
সার্বভৌম ক্ষমতাকে সকলের সার্বিক প্রয়োজন ও স্বার্থকে তার স্থান-কাল-
বয়সের আলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে হবে। এসব স্বার্থ ও প্রয়োজন পূরণের সকল সামগ্রী প্রয়োজনানুপাতে সদা সর্বদা সরবরাহ করতে সক্ষম হতে হবে।

খ. স্থান-কাল-পাত্রসহ বস্তুনিচয়ের সৃষ্টি, বিকাশ, পরিচালন, সংরক্ষণ,
ধ্বংস-লয় ইত্যাদি সকল ব্যাপারে ক্ষমতাবান হতে হবে। কিন্তু নিজে
এসবের দ্বারা কোনভাবেই প্রভাবিত হবে না এবং এসবের কোন কিছুর
প্রয়োজন তার হবে না। অথার্ৎ সার্বভৌম হবে অমুখাপেক্ষী।
গ. সেই সত্তার অবশ্যই কোন দোষ-ত্র“টি থাকবেনা এবং কোন প্রকার
দুর্বলতা তাকে স্পর্শ করবে না।

ঘ. তিনি সবার্বস্থায় সকলের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান থাকবেন।

ঙ. আইন প্রণয়নই শুধু নয়, বরং প্রণীত আইন পুঙ্খানুপুঙ্খানুরূপে পালিত
হচ্ছে কিনা তার তদারক করার ক্ষমতা, পালিত না হলে তার জওয়াবদিহি
গ্রহণের ক্ষমতা, এ সব ক্ষেত্রে কার শিথিলতা, গোঁড়ামী, অবহেলা,
অবাধ্যতা কতখানি তার বিচার ব্যবস্থার জন্য মানব বংশের শুর“ থেকে
শেষ পর্যন্ত সকলকে একত্রে এক ময়দানে একই সময়ে হাজির করার
ক্ষমতার উলি­খিত সার্বভৌম ক্ষমতার থাকতে হবে।

চ. অপরদিকে যারা যতখানি নিষ্ঠার সাথে আন্তরিকতার সাথে প্রণীত
আইনের কম-বেশী ক্ষুদ্র-বৃহৎ অংশ পালন করেছে তাদের প্রচেষ্টা
ঐকান্তিকতা একনিষ্ঠতার আলোকে তাদের যথাযথ পুরস্কার দিতেও
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারীকে সক্ষম হতে হবে। এছাড়া আরও অনেক
বৈশিষ্ট্য আছে যা আমরা এ মুহূর্তে উলে­খ করা থেকে বিরত থাকলাম।
বস্তুতঃ ইসলামি জ্ঞানের মূল উৎস কোরআন ও সুন্নাহ আধুনিক রাষ্ট্র
বিজ্ঞানীদের কল্পিত সার্বভৌম ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যের কোনটাকেই বাদ না
দিয়ে বরং তার সাথে আমরা ক-থেকে চ পর্যন্ত যে ছয় ধরনের ক্ষমতার
কথা উলে­খ করেছি তাকেও যোগ করে। এবং আল­াহ পাককেই সেই
সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র চূড়ান্ত অধিকারী বলে ঘোষণা করে। ইহাই
ইসলামের একত্ববাদ বা তৌহিদবাদের মূল ও মর্মকথা।
ইসলাম আল­াহ পাকের যে সব গুণ বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করে তা
নিম্নরূপ ঃ

১. তিনি অনাদি-অনন্ত, তিনি প্রকাশ্য, তিনিই গোপন, (অথার্ৎ তাঁর
উপস্থিতির নিদর্শন, প্রমাণ সবার্ধিক এবং সর্বত্র বিরাজিত। অপরদিকে পঞ্চ
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাঁকে এ যাবৎ কেউ কখনও অনুভব করেনি। এবং তিনি
সর্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ। এর প্রমাণ আল­াহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থ: “তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান
এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। (হাদীদ, ৫৭ঃ ৩)
২. তিনি এক, একক, অদ্বিতীয়, তিনি জাত নহেন এবং কাউকে তিনি
জন্মও দেন নি। আল­াহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থ: “বলুন, তিনি আল­াহ্, এক। আল­াহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম
দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।”
(ইখলাস : ১-৪)

৩. অর্থ: “কোন কিছুই তঁার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
(শুরা, ৪২ঃ ১১)

৪. অর্থ : “তার কোন অংশীদার নেই।” (ফোরকান, ২৫ঃ ২)
অর্থ : “তারা যা বলে তা থেকে আল­াহ্ পবিত্র।” (সফফাত, ৩৭ঃ ১৫৯)
৫. সার্বভৌম সত্তা আল­াহর গুণাবলী সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতে
যেভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ
অর্থ : “আল­াহ, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি
চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।”
৬. (অনন্ত-অসীম সত্তা, সৃষ্টির তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সত্তা
অনাদি ও অনন্তকালব্যাপী বিরাজমান, আপন সত্তার জন্য যিনি কারও
মুখাপেক্ষী নন, অথচ সর্ব সত্তার তিনি ধারক তাকেই কাইয়্যুম বলে।)
অর্থ: “তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করেনা।”
(অন্য কথায় সার্বভৌম ক্ষমতার অধিপতিকে যদি তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ
করে তবে তার এই দুর্বল মুহূর্তে তাঁর আইন পালিত বা রক্ষিত হচ্ছে কিনা
অথবা কোথাও কোন ত্র“টি হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে সার্বভৌম ক্ষমতা
গাফেল হতে বাধ্য হবে। এমন দোষ-ত্র“টি বা এরূপ অসংখ্য অগণিত
দোষ-ত্র“টি যা সমগ্র মানুষ কল্পনা করতে পারে তার থেকে তিনি মহান
আল­াহ একেবারেই মুক্ত।)

অর্থ: “আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর।”
(অথার্ৎ যা কিছু আকাশ ও পৃথিবীতে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় কিংবা
আমাদের অনুভূতির জগতে বিদ্যমান সে সবের একচ্ছত্র মালিক
অধিপতি এই আল­াহ। এমনকি যা আমাদের ধারণা কল্পনা অনুভূতির
অগম্য তারও মালিক তিনি।)

অর্থ: “কে সে, যে তার অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ
করবে?”
(তিনি এমন চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী যে, তাঁর নিকট সুপারিশ করতে
হলেও সুপারিশকারীকে কার ব্যাপারে কি সুপারিশ, কতখানি সুপারিশ করা
হবে তার যেমন অনুমোদন নিতে হবে তেমনি সুপারিশকারীর নিজের
সুপারিশ করার যোগ্যতা সম্পর্কেও সেই মহান আল­াহ সার্বভৌম সত্তার
পূর্ব অনুমোদন আবশ্যক।)
অর্থ: “তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত।”
(অথার্ৎ তিনি এমন সর্বজ্ঞাত, অবহিত যে শুধু ঘটনা নয়, ঘটনার আগ-
পিছসহ পরিপূর্ণ পরম্পরা তাঁর নখদর্পণে। সত্যিই এমন ক্ষমতার
অনুপস্থিতিতে সার্বভৌম হওয়া অসম্ভব।)
অর্থ: “তিনি (মহান আল­াহ) যা ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই
তারা আয়ত্ত করতে অক্ষম।”
অর্থ: “তাঁর আরশ (আসন, অবস্থান) আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত।”
(আসমান ও যমীনে কোথাও কোন বিন্দুমাত্র স্থান নেই এবং কালের স্রোতে
এমন কোন কাল নেই যেখানে যে সময়ে তাঁর মহামহিম উপস্থিতির অভাব অনুভূত হয়েছে কিংবা হবে। বস্তুতঃ এমন সর্ব ব্যাপক সার্বভৌম সত্তার বর্ণনাই আল­াহ পাক কোরআনে আমাদেরকে জানাচ্ছেন।)
অর্থ: “এতদুভয় (অথার্ আসমান ও যমীনের সকলের) রক্ষণাবেক্ষণে তিনি শ্রান্ত-ক্লান্ত হন না।”
(এই সার্বভৌম সত্তা শ্রান্তি-ক্লান্তি-অবসাদ-জড়তা ইত্যাকার দোষ-
ত্র“টির উর্ধ্বে। বস্তুতঃ সার্বভৌম সত্তার এসব দোষ-ত্র“টি থাকলে তাঁর এই
দুর্বল মুহূর্তে সৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন, বিকাশ সব কিছুই বিপর্যস্ত
হতে বাধ্য।)
অর্থ: “তিনিই মহান, তিনিই শ্রেষ্ঠ।”
(এখানে এবং শব্দের পূর্বে ব্যবহার করার কারণে এর
পরিপূর্ণ ভাবার্থ হলো একমাত্র তিনিই সবোর্চ্চ এবং একমাত্র তিনিই শ্রেষ্ঠ
এবং এ ব্যাপারেও তাঁর কোন তুলনীয় বা অংশীদার নেই।)
অর্থ: “তিনি তাঁর সকল বান্দাহর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।”
(অথার্ৎ তাঁর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন কেউ কোথাও কখনও
নেই, ছিলনা এবং হবেও না।)
অর্থ: “তিনি প্রজ্ঞাময় এবং সর্বজ্ঞাত।”
(এখানেও ও শব্দ যোগে আসায় তার অর্থ হচ্ছে একমাত্র
তিনিই প্রজ্ঞাময় এবং একমাত্র তিনিই সর্বজ্ঞাতা। এ ব্যাপারেও কারও
কোন অংশ নেই। তিনি সকলের জওয়াবদিহীতা করতে পারেন, অথচ
তাঁকে জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই, তিনি সকলকে পাকড়াও করতে পারেন,
শাস্তি দিতে পারেন, পুরস্কৃত করতে পারেন। অথার্ৎ সর্ববিষয়েই তিনি
পূর্ণ ক্ষমতাবান। আর এই ক্ষমতার ব্যবহার তিনি পূর্ণ বিচক্ষণতা সহকারে
ন্যায়ানুগভাবে করেন।)
আইন অমান্যকারীদেরকে পাকড়াও করা, যথাযথ শাস্তি দেয়ার পূর্ণাঙ্গ
ক্ষমতা ও গুণটিও কেবল মাত্র আল­াহর মধ্যেই পাওয়া যায়। কোর আনের
দলিল নিম্নে:-

অর্থঃ- বলুন ইয়া আল­াাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে
ইচছা ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নাও
এবং যাকে ই্চছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচছা অপমানে পতিত কর।
তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে
ক্ষমতাশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৩ ঃ ২৬)

অর্থঃ- পূণ্যময় তিনি, যঁার হাতে ক্ষমতা। তিনি সবকিছুর উপর
সর্বশক্তিমান। (সূরা মূলক- ৬৭ ঃ ১)

অর্থঃ- তিনিই রাত্রি বেলায় তোমাদেরকে করায়ত্ত করে নেন এবং যা কিছু
তোমরা দিনের বেলায় কর, তা জানেন। অত:পর তোমাদেরকে দিবসে
সম্মুখিত করেন-যাতে নির্দিষ্ট ওয়াদা পূর্ণ হয়। (সূরা আন’আম- ৬ ঃ ৬০
)
অর্থঃ- অনন্তর তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অত:পর
তোমাদেরকে বলে দিবেন, যা কিছু তোমরা করছিলে। তিনিই স্বীয়
বান্দাদের উপর প্রবল। তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে
রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন
আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্না হস্তগত করে নেয়। (সূরা
আন’আম- ৬ ঃ ৬১ )

অর্থঃ “অত:পর সবাইকে সত্যিকার প্রভু আল­াহ্র কাছে পেঁৗছানো হবে।
শুনে রাখ, ফয়সালা তঁারই এবং তিনি দ্র“ত হিসাব গ্রহণ করবেন।(সূরা
আন’আম:৬২)
সুরা হাশরের শেষে মহান রাব্বুল আলামীন স্বীয় সার্বভৌম সত্তার
পরিচয় দিচ্ছেন নিম্নোক্ত ভাষায়-
অর্থ: “তিনিই আল­াহ্ তিনি ব্যতিত কোন ইলাহ (উপাস্য, আরাধ্য, স্তুতি
পাওয়ার যোগ্য, আইনদাতা, শাসনদাতা) নেই।”
তিনিই অধিপতি, তিনি পবিত্র, তিনিই শান্তি।
অর্থ: “তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক। তিনিই একমাত্র
পরাক্রমশালী, তিনিই একমাত্র প্রবল, তিনিই একাই অতীব মহিমান্বিত।”
অর্থ: “তারা (ভ্রমবশতঃ) তাঁর সাথে যে বা যাদের অংশীদার সাব্যস্ত করে
মহান মহিমান্বিত আল­াহ তার বা তাদের থেকে অতবী পবিত্র।”
অর্থ: “তিনিই আল­াহ সৃজনকতার্, (অথার্ৎ অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে
আনয়নকারী সত্তা); উদ্ভাবনকতার্; (পরিপূর্ণ) রূপদাতা।”
(অথার্ৎ যে সবের কোন প্রকার অস্তিত্বই ছিলনা তা সবের পরিকল্পনাকারী,
রূপদাতা, অস্তিত্বে আনয়নকারী মহান নিপুন ত্র“টিহীন সত্তা তিনিই
আল­াহ।)
অর্থ: “সকল উত্তম নাম তাঁরই”
(অথার্ৎ তাঁর নামগুলো, তাঁর গুণাবলী যথাযথ, পরিপূর্ণ সবার্ধিক
সৌন্দর্যমন্ডিত।
অর্থ: “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা
তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।”
অর্থ: “এবং তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।”
তিনি আরও বলেন ঃ
অর্থ: “সকল কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন অতঃপর সকল কিছুর যথাযথ
পরিমাণ এবং নিয়ম-বিধান তিনি নিধারণ করে দিয়েছেন।” (তাঁর নিধার্রিত
পরিমাণ ও পরিমাপের বাইরে যাওয়ার সাধ্য কারও নেই।) (ফোরকান,
২৫ঃ ২)
অর্থ: “আল­াহ ছাড়া এমন স্রষ্টা কি আছেন, যিনি আসমান ও যমীন থেকে
তোমাদের রিযিক (তথা যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ)-এর ব্যবস্থা করেন।”
(ফাতির, ৩৫ঃ ৩) এতদসত্বেও তিনি বলেন,
অর্থ: “তিনিই অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরাবর্তন ঘটান। তিনি
ক্ষমাশীল, প্রেমময়; আরশের অধিকারী ও সম্মানিত। তিনি যা ইচ্ছা তাই
করেন। (অথার্ৎ তাঁর ইচ্ছার বাধা হওয়ার সাধ্য কারও কষ্মিনকালেও নেই
বা থাকতে পারেনা।)
সূরা ফাতিহাতে তিনি এরশাদ করেন ঃ
শেষ বিচার দিনের
অধিপতি।
অতীব দয়ালু ও
কর“ণাময় এবং
তিনি জগতসমূহের
প্রতিপালক;
বস্তুতঃ সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে পৃথিবীর সকল জ্ঞানীগণ যতগুলো গুণ
বৈশিষ্ট্য কল্পনা করতে পেরেছেন তার চাইতে অনেক বেশি বৈশিষ্ট্য ও
গুণাবলীতে আল­াহর স্বীয় সত্তা মহিমান্বিত। তাঁর গুণাবলী যে বর্ণনা করে
শেষ করা যায় না তার বর্ণনাও তিনি আমাদের জানাচ্ছেন নিম্নোক্ত ভাষায়,
বলুন (হে মুহাম্মাদ)! আমার প্রতিপালকের গুণাবলী লিপিবদ্ধ করার জন্য
সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের গুণাবলীর বর্ণনা শেষ
হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে, যদিও এর (অথার্ৎ লিপিবদ্ধ করার
কালির প্রয়োজনে) অনুরূপ আরও সমুদ্র পরিমাণ (কালি) সংযোগ করা
হয়। (কাহাফ, ১৮ঃ ১০৯) আমরা পবিত্র কালামে পাক থেকে অল্প কয়টা
মাত্র উদ্ধৃতির মাধ্যমে সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য উলে­খ করলাম, পবিত্র
কোরআনে এরূপ আরও শত শত বর্ণনা রয়েছে।
এই উপরোক্ত গুণ বৈশিষ্টের অধিকারীই সার্বভৌমত্ব ও সকল ক্ষমতার
একমাত্র মালিক এবং তিনিই একমাত্র আইন-বিধানদাতা রব।
বর্তমানে যারা মানুষের জন্য আইন প্রনয়ণ করেছেন সেই সকল
ত্বাগুতদের মধ্যে কি এই গুণাবলী আছে ?
আল­াহ (সুব:) প্রশ্ন করেছেন। দলিল নিম্নে পেশ করা হলো:
অর্থঃ- বল, আছে কি কেউ তোমাদের শরীকদের মাঝে যে সৃষ্টি কে পয়দা
করতে পারে এবং আবার জীবিত করতে পারে? বল, আল­াহ্ই প্রথমবার
সৃষ্টি করেন এবং অত:পর তার পুনরুদ্ভব করবেন। অতএব, কোথায়
ঘুরপাক খাচেছ?(সূরা ইউনুস-১০ঃ৩৪)
অর্থঃ জিজ্ঞেস কর, আছে কি কেউ তোমাদের শরীকদের মধ্যে যে সত্য-
সঠিক পথ প্রদর্শন করবে? বল, আল­াহ্ই সত্য-সঠিক পথ প্রদর্শন করেন,
সুতরাং এমন যে লোক সঠিক পথ দেখাবে তার কথা মান্য করা কিংবা যে
লোক নিজে নিজে পথ খুঁজে পায় না, তাকে পথ দেখানো কর্তব্য।
অতএব, তোমাদের কি হল, কেমন তোমাদের বিচার? (সূরা ইউনুস:৩৫ )
অর্থ:- আর তিনিই তঁার বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান; আর তিনি প্রজ্ঞাময়,
সম্যক অবহিত। (সুরা আন’আম:১৮)

জুমার বয়ান। তারিখ : ১১-০৯-২০০৯
স্থান : হাতেম বাগ জামে মসজিদ, ধানমন্ডি ঢাকা।

Previous
Next Post »