জাদুর চিকিৎসাঃ
আল্লাহর পক্ষ থেকে জাদুর চিকিৎসা দুভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ : জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই উহা থেকে বাঁচার উপায় ।
আর সেগুলাে হলাে
১। সকল ওয়াজিব পালন করা, হারাম সমূহ থেকে তাওবাহ করা।
২। প্রচুর পরিমাণে কুরআন মাজিদ প্রতি দিন নিয়মিত অজিফা হিসেবে পাঠ
করা।
৩। বিভিন্ন প্রকার আওউ (মানে যে সব দো'আর মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া হয়) ও যিকিরসমূহ দ্বারা রক্ষা পাওয়া, আর সেগুলাে নিম্নরূপ:
بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الأرض ولا في السماء وهو السميع
العليم
শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও জমিনের কোনাে বস্তুই কোনাে ক্ষতি করতে পারবে না, তিনি মহাশ্রোতা মহাজ্ঞানী। (সকাল বিকাল তিনবার করে পাঠ করবেন) (তিরমিযী ৩৩৮৮, আবু দাউদ ৫০৯০, ইবনে মাজাহ ৩৮৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৪৭৪) সকল সালাতের পর, নিদ্রার পূর্বে ও সকাল সন্ধ্যা একবার আয়াতুল কুরসী পড়া এবং সুরা ফালাক, সুরা নাস ও সুরা ইখলাস সকল সালাতের পরে একবার করে এবং মাগরিব ও ফজরের পর তিনবার করে পড়া। আরেকটি দু'আ : (সকাল সন্ধ্যায় একশত বার করে পড়তে হবে ।)
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير
আল্লাহ ছাড়া কোনাে ইলাহ নেই তিনি এক তার কোনাে শরীক নেই, তারই জন্য রাজত্ব আর তিনি সর্বশক্তিমান। (বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৩, মুসলিম ৭০১৮) সকাল ও সন্ধ্যার পাঠনীয় দুআ পড়া, সালাত শেষের দুআগুলাে, নিদ্রার পূর্বের ও পরের দু'আ, বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার দু'আ, যান বাহনের দুআ সমূহ, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দু'আ ও বিপদাপদে পঠনীয় দু'আ গুলো নিয়মিত পাঠ করা । দ্বিতীয় ভাগ : জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে নিম্ন লিখিত যে কোনাে একটির মাধ্যমে চিকিৎসা হতে পারে :
১. কোথায় জাদু করা হয়েছে তা জানা গেলে : সেই জাদুকৃত বস্তু বের করে নিয়ে আসতে হবে। অতঃপর সেখানে গিরা ইত্যাদি থাকলে মুআববেযাতাইন (সুরা নাস ও ফালাক) পড়ে তা খুলতে হবে। তারপর ঐ বস্তুকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। ২. শরীয়ত সম্মত ঝাড়-ফুক : কুরআনের আয়াত বিশেষ করে মুআববেযাতাইন (সুরা নাস ও ফালাক), সুরা বাকারা, দুআ ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়-ফুক করবে। (সামনে ঝাড়-ফুকের কিছু দু'আ উল্লেখ করা হবে বাকি দু'আ সমূহ আমাদের কিতাবুদ দু'আ-তে পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ) ৩. জাদু বের করা : যদি পেটের মধ্যে জাদুর ক্রিয়া অনুভব হয় তবে ঔষধ ইত্যাদি দিয়ে তা পায়খানার মাধ্যমে বের করে দেয়ার চেষ্টা করবে। যদি অন্য কোনাে স্থানে থাকে তবে শিঙ্গা লাগানাের মাধ্যমে তা বের করার চেষ্টা করবে ।
৪. প্রাকৃতিক ঔষধসমূহ : অনেক প্রাকৃতিক উপকারী ঔষধ আছে। যেগুলাে কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত । মানুষ যদি আস্থা ও সততার সাথে সেগুলাে ব্যবহার করে এ বিশ্বাস রেখে যে, আরােগ্য একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে। তবে ইনশাআল্লাহ উহা দ্বারা আল্লাহ উপকার করবেন। এমনি আর কিছু ঔষধ আছে ঘাস ও অন্যান্য তরুলতা থেকে, সেগুলাে পরীক্ষা করে বানানাে হয়েছে। অতএব সেগুলাে দ্বারা উপকৃত হওয়া নিষেধ নয়। আল্লাহর অনুমতিক্রমে উপকারী প্রাকৃতিক চিকিৎসা মধ্য থেকে একটি হলাে মধু। মধু দ্বারা চিকিৎসা :
মধু সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে :
يخرج من بطونها شراب مختلف ألوانه فيه شفاء للناس
'তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে। মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। (নাহল ১৬:৬৯) কালোজিরা দ্বারা চিকিৎসা :
কালোজিরা সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে
ن هذه الحبة السوداء شفاء من كل داء إلا من الام
'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই কালাে জিরা মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের চিকিৎসা। (বুখারী ৫৬৮৭, ৫৬৮৮, মুসলিম ৫৮৯৬,
৫৮৯৯) জমজমের পানি দ্বারা চিকিৎসা :
ইহা সকল পানির প্রধান, সর্বোৎকৃষ্ট সবচেয়ে মূল্যবান ও আত্মার নিকট সবচেয়ে প্রিয় পানি। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে
عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ماء زمزم لما شرب له
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জমজমের পানি যে রােগের জন্য পান করা হয় তার জন্য চিকিৎসা।' (ইবনে মাজাহ ৩০৬২, মুসনাদে আহমাদ ১৪৮৪৯) বৃষ্টির পানি দ্বারা চিকিৎসা :
বৃষ্টির পানি আল্লাহর রহমতের পানি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে
ونزلنا من السماء ماء مباركا
আর আমি আসমান খেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। (ক্বাফ ৫০:৯) এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বৃষ্টির পানিকে একটি অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর নিশ্চয়ই অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয় কোনাে মূল্যবান জিনিস দ্বারা । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টির পানি শরীরে মাখাতেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে
عن أنس قال قال أنس أصابنا ونحن مع رسول الله -صلى الله عليه وسلم - مطر قال فحسر رسول الله -صلى الله عليه وسلم - ثوبة حتي أصابة من المطر فقلنا يا رسول الله لم صنعت هذا قال لأنه حديث عهد بربه تعالی
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের গায়ে বৃষ্টির পানি পড়তে লাগলাে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের থেকে কাপড় গুটিয়ে ফেললেন, যাতে বৃষ্টির পানি গায়ে লাগে। আমরা বললাম, 'ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি এই কাজটি কেনাে করলেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যেহেতু এটি তার রবের কাছ থেকে সদ্য আগমণ করবে। (মুসলিম ২১২০)
যাইতুনের তেলের দ্বারা চিকিৎসা :
যাইতুনের তেল উপকারী । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে
عن أبي أسيد قال قال رسول الله صلى ال له عليه وسلم كلوا الزيت واذهنوابه فانه من شجرة مباركة
আবু আসিদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তােমরা যাইতুনের তেল খাও ও উহা দ্বারা (শরীরে) তেল মর্দন কর, নিশ্চয়ই ইহা বরকতময় বৃক্ষ হতে। (মুসনাদে আহমাদ ১৬০৫৫, ১৬০৫৪, ইবনে মাজাহ ৩৩১৯, তিরমিযী ১৮৫২)। বাস্তব পরীক্ষা, ব্যবহার ও গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, উহা সর্বোৎকৃষ্ট তেল। এগুলাে কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত চিকিৎসা। এ ছাড়াও নিয়মিত গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া ও সুগন্ধি ব্যবহার করা।
ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আজকে এই পর্যন্তই।