সাওম রাখা, ঈদ করা এবং চাঁদের তারিখ নির্ভর অন্যান্য ইবাদাতের জন্য ও "সকলের" চাঁদ দেখা জরুরী কি না? এ ব্যাপারে
"নিজ দেশের সীমায় রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে যতগুলাে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার মূল বক্তব্য বহন করছে আলােচিত হাদীস দু'টি। এ কারণেই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকল ফকীহ ও আলেমগণ নিজ নিজ মতের সমর্থনে অত্র হাদীস দুটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ উক্ত হাদীস দু'টি হচ্ছে:
এক: রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন:
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم ذكر رمضان فقال لا تصوموا حتى تروا الهلال ولا تقطروا حتى تروه فإن غم عليكم فاقدروا له
অর্থ: “আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
তােমরা (রামাদানের) চাঁদ না দেখে সাওম রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখে সাওম ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা) যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে গননা করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে।” (সহীহ বুখারী ১৯০৬; সহীহ মুসলিম ২৫৫০; সুনানে নাসায়ী ২১২০) দুই রাসূলুল্লাহ (সা:) আরাে ইরশাদ করেন:
عن أبي هريرة - رضی صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته فإن غمى عليكم فأكملوا العدد.
অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: তোমরা চাঁদ দেখে সাওম রাখ এবং চাঁদ দেখে ইফতার করাে (ঈদ করাে)। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের সংখ্যা (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করাে। (সহীহ মুসলিম ২৫৬৭) যে সকল ফকীহ ও আলেমগণ সমগ্র বিশ্বে একই দিনে আমলের পক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন তারা নিজেদের মতের সমর্থনে অত্র হাদীস দুটিকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তাদের যুক্তি হল হাদীস দুটির মধ্যে
"তোমরা" বলে সম্বােধন দেশ মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে ব্যাপক অর্থবােধক সম্বােধন।
আবার কিছু সংখ্যক সম্মানিত ফকীহ ও আলেম দেশ ও এলাকার ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন দিনে আমলের ফাতওয়া দিয়েছেন তাদের যুক্তি হল পবিত্র হাদীস দু'টির মধ্যে "তােমরা বলে সম্বােধন দেশ ও এলাকা বিশেষে৬ বা সীমিত অর্থে সম্বােধন। যদিও তাদের এ যুক্তির সমর্থনে শরয়ী কোন দলীল নেই। বরং যােগাযােগ ব্যবস্থার সমস্যাকে সামনে রেখে তারা এ যুক্তি দিয়েছেন। বর্তমান উন্নত তড়িৎ যােগাযােগ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে উক্ত যুক্তি উপস্থাপনের কোন সুযােগ নেই। কিন্তু ফকীহ ও আলেমগণের এ উভয় শ্রেণীর মধ্যে কাদের যুক্তি অধিক শক্তিশালী, বাস্তব সম্মত ও গ্রহণযােগ্য আমরা সে আলােচনায় না গিয়ে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিজ আমলের দিকে দৃষ্টি দিব । কারণ পবিত্র কুরআন এর বর্ণনা এবং তার পবিত্র জবান মুবারকে বর্ণিত হাদীস গুলােকে রাসুলুল্লাহ (সা:) নিজে যেভাবে আমল করেছেন সকল উম্মতের জন্য সেভাবেই আমল করা জরুরী।
রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিজ আমল রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর পবিত্র হায়াতে ২য় হিজরী থেকে ১০ম হিজরী পর্যন্ত সর্ব মােট ৯ বার পবিত্র রামাদান মাসের সাওম রেখে ছিলেন। সুতরাং আমাদের গভীর দৃষ্টি দেয়া উচিৎ, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর পবিত্র আমলের দিকে। রামাদান মাসে সাওম রাখা এবং শাওয়াল মাসে ঈদ করার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পবিত্র আমলে বর্নিত হাদীস দুটির প্রতিফলন কিভাবে করেছেন। উল্লেখিত হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা:) কি শুধু নিজে চাঁদ দেখে সাওম রেখেছেন, ঈদ করেছেন? না কি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও সাওম রেখেছেন, ঈদ করেছেন? এ প্রসংগে পবিত্র হাদীস শরীফে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে:
عن ابن عمر قال تراءى الناس الهلال فأخبرت رسول الله -صلى الله عليه وسلم - أني رأيته فصام وأمر الناس بصيامه.
অর্থ: “আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন কিছু সংখ্যক মানুষ (রমজানের) নুতন চাঁদ দেখে। আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে সাওম
রাখলেন এবং মানুষকেও সাওম রাখতে নির্দেশ দিলেন।” (সুনানে আবু দাউদ ২৩৪৪; সুনানে তিরমিজি ৭৫৩; সুনানে বায়হাকী ৮২৩৫) এমনি ভাবে হাদীসে আরও বর্ণিত হয়েছে:
عن ابن عباس قال : جاء أغراب إلى النبي -صلى الله عليه وسلم- فقال : إني رأيت الهلال يعني هلال رمضان فقال : أشهد أن لا إله إلا ال له «. قال : نعم قال : « أتشهد أن محمدا رسول الله ». قال : نعم قال :« یا بلا أذن في أن يصوموا غذا »
অর্থ: “আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; একজন মরুচারী রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট আসলাে এবং বললাে, আমি প্রথম চাঁদ অর্থাৎ রামাদানের চাঁদ দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি "আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই একথা সাক্ষ্য দান কর?
সে বলল হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহর রাসূল তুমি কি একথার সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, হে বেলাল! মানুষের কাছে ঘােষণা করে দাও তারা যেন আগামী দিন সাওম পালন করে। (সুনানে আবু দাউদ ২৩৪২; সুনানে তিরমিজি ৬৯১; সুনানে নাসায়ী ২১১২; সুনানে বায়হাকী ৮২৩০) হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে:
عن ربعی بن حراش عن رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم قال اختلف الناس في آخر يوم من رمضان فقدم أعرابيان فشهدا عند رسول الله ص لى الله
عليه وسلم بالله لأهة الهلال أس عشية فأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس أن يفطروا زاد خلف في حديثه وأن يغدوا إلى مصهم
অর্থ: "রিবয়ী ইবনে হিরাশ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা লােকেরা রামাদানের শেষ দিবস নিয়ে মতভেদ করে। তখন দু'জন গ্রামে বসবাসকারী মুসলিম নবী (সা:) এর নিকট উপস্থিত হয়ে আল্লাহর শপথ করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, তারা গতকাল সন্ধ্যায় শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লোকের সিয়াম ভঙ্গ করার আদেশ দেন। হাদীসের একজন বর্ণনাকারী খালাফ তার বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আরাে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন পরদিন সকালে
ঈদের সালাত আদায় করার জন্য ময়দানে গমন করে।” (আবু দাউদ ২৩৪১, হাদীসটি সহীহ) এ হাদীস থেকে সুস্পষ্ট হলাে যে, নিজ এলাকায় চাদ না দেখার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা:) ও তাঁর সাহাবীগণ সিয়াম পালন অব্যাহত রেখেছিলেন । রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট দ্বীনের শেষভাগে অনেক দূর থেকে আসা দু'জন গ্রাম্য লােকের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এবং তার উপর আমল করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণিত হলাে যে, নিজ এলাকায় চাদ দেখা না গেলেও অন্য এলাকায় চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছলে সেই অনুযায়ী সিয়াম, লাইলাতুল কদর, হজ্জ ইত্যাদি পালন করা যাবে। কেননা এই হাদীসে দূরত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
عن أبي عمير بن أنس عن عمومة له من أصحاب النبي -صلى الله عليه وسلم أن ركبا جاءوا إلى النبي صلى الله عليه وسلم - يشهدون أنهم رأوا الهلال بالأمس فأمرهم أن يفطروا وإذا أصبخوا أن يغدوا إلى مصلاهم
অর্থ: “আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট একদল অশ্বারােহী আসলো এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রাসূলুল্লাহ (সা:) মানুষকে সাওম ছাড়ার আদেশ দিলেন । পরের দিন প্রাত:কালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন। (সুনানে আবু দাউদ ১১৫৯) অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে
مصلاهم لصلاة العيد كما في رواية أخرى قال المظهر يعني لم يروا الهلال في المدينة ليلة الثلاثين من رمضان فصاموا ذلك اليوم فجاء قافلة في أثناء ذلك اليوم وشهدوا أهم رأوا الهلال ليلة الثلاثين فأمر النبي بالإفطار وبأداء صلاة العيد في اليوم الحادي والثلاثين
অর্থ: “তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রামাদান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রামাদানের সাওম রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দুর থেকে
আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে । অতপর, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে সাওম ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩) উক্ত হাদীস চারটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল দ্বারা নিমােক্ত বিষয় গুলাে প্রতিষ্ঠিত হয় । এক: মাস প্রমাণের জন্য সকলের চাঁদ দেখা জরুরী নয় বরং রামাদানে একজন আর ঈদে দুইজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিমের দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট হবে । দুই: নিজ দেশের আকাশে নুতন চাঁদ দেখতে হবে এমন শর্ত করা যাবে
না।
তিন: দূরবর্তীদের চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে অন্য সকলের উপর আমল জরুরী হবে। একারণেই মুহাদ্দেসীনগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর আমলকে সামনে রেখে চাঁদ দেখা সংক্রান্ত হাদীস দুটির নিম্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
হাদীস দুটির প্রথমটির ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল বারী”-তে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন
قوله: "فلا تصوموا حتى تروه" ليس المراد تعليق الصوم بالرؤية في حق كل أحد، بل المراد بذلك رؤية بعضهم وهو من يثبت به ذلك، إما واحد على رأي الجمهور أو اثنان على رأي آخرين. ووافق الحنفية على الأول إلا أهم خصوا ذلك بما إذا كان في السماء علة من غيم وغيره، وإلا متى كان صحو لم يقبل إلا من جمع كثير يقع العلم بخبرهم. وقد تمسك بتعليق الصوم بالرؤية من ذهب إلى إلزام أهل البلد برؤية أهل بلد غيرها، ومن لم يذهب إلى ذلك قال لأن قوله: حتى تروه" خطاب أناس مخصوصين فلا يلزم غيرهم، ولكنه مصروف عن ظاهره فلا يتوقف الحال على رؤية كل واحد فلا يتقيد بالبلد
অর্থ: “রাসূলুল্লাহ (সা:) এর বাণী 1++ ১ (তারা চাদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম রাখবে না) এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত । আর অন্যদের মতে দু'জনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছেন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযােজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন “যতক্ষণ না তাকে দেখবে এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বােধন করা হয়েছে । যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযােজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন ও বিকৃতি। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না শরহে ছহীহীল বুখারী, খন্ড-৪, পৃঃ-১২৩) (ফাতহুল বারী ফি দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ মুসলিম শরীফে। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুসলিম শরিফের প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার ইমাম নববী (র:) বলেন:
قوله صلى الله عليه وسلم ( صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته ) المراد رؤية بعض المسلمين ولا يشترط رؤية كل انسان بل يكفي جميع الناس رؤية عدلين وكذا عدل على الأصح هذا في الصوم وأما الفطر فلا يجوز بشهادة عدل واحد على هلال
شوال عند جميع العلماء
অর্থ: “এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তােমরা সাওম ছাড়, ঈদ কর ।”
এর অর্থ হলাে কিছু মুসলিমের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবেনা যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে সাওমের ক্ষেত্রে একজন সৎ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট । আর অধিকাংশ ফকীহগণের মতেশাওয়ালের নুতন চাঁদ প্রমাণের জন্য একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবে না। (শরহে নাবাবী আলা মুসলিম ৭/১৯০) জামে তিরমিজি শরীফের মুকাদ্দামায় লেখা হয়েছে:
باب ماجانی ها به روی منقل في مذهب الامن الوطنية في روايات الاول اور اعتبارية اهل پلی اهل بیلد أخروا في اعتبارها تور واناث الإتيان مقار الاحتيال هلال رمضان وعدم الانارف مشارين والدرورة و الأقماش الأفارین رمان نحن اشهر الروايات في الأوراد و الدوري المناهي
অর্থ: "প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমল করবে কিনা? এ প্রসংগে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) থেকে তিনটি মত বর্নিত হয়েছে। ১) এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহনীয় হবেনা। ২) এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহনীয় হবে। ৩) বিশেষ সতর্কতা, যেমন সাওম রেখে ইবাদতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে গ্রহনীয় হবে, অন্যথায় গ্রহনীয় হবেনা। কিন্তু এ তিনটি মতের মধ্যে প্রসিদ্ধমত হলাে ২য়টি এবং এমতের উপর-ই হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত” । (তিরমিজি শরীফ মুকাদ্দামা ২২পৃষ্ঠা) অতএব, পবিত্র কুরআন মাজীদ, হাদীস শরীফ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল সংক্রান্ত উল্লেখিত আলােচনার মাধ্যমে এটাই প্রতিষ্ঠিত যে সাওম, ঈদ, কুরবানী এবং চাঁদের তারিখ নির্ভর অন্যান্য ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে চন্দ্রমাস প্রমাণের জন্য “নিজ নিজ দেশের সীমা রেখার মধ্যে এবং "নারী-পুরুষ সকলকে চাঁদ দেখতে হবে না। বরং পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন দু'জন সৎ মুসলিম ব্যক্তির চাঁদ দেখার মাধ্যমেই সমগ্র বিশ্বে এক বিশ্ব জনীন (Universal ) ভিত্তিতে চান্দ্রমাস শুরু হওয়া প্রমাণিত হবে এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একই দিনে নিজ নিজ স্থানীয় সময় অনুযায়ী আমল করা জরুরী হবে।