তাওহীদের শর্ত ৭ (সাত) টি
প্রথম শর্ত ঃ (জ্ঞান) ঃ
আলাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থ: “তুমি জেনে রাখো, আলাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।” (মুহাম্মদ,
১৯)
এটা এ জন্য যে, আলাহ এক এবং একমাত্র তিনিই ইবাদতের হকদার’- এ
কথা না জানা, বান্দার ইসলাম গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথে বিরাট অন্তরায়।
এ কারণেই (তাওহীদের) এলেম বা জ্ঞানকে বান্দার ইসলাম কবুলের শর্ত
নিধার্রণ করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
অর্থ: “আলাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” একথা জানা অবস্থায় যে ব্যক্তি
মৃত্যু বরণ করলো সে জান্নাতে যাবে।” (মুসলিম)
আলামা শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান আল শাইখ (রহঃ) বলেছেনঃ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ওলামায়ে কেরাম ‘লা ইলাহা ইলালাহর
অর্থ এবং এর দ্বারা কি অস্বীকার করা হয়, আর কি সাব্যস্ত করা হয় তা
বর্ণনা করতে গিয়ে উলেখ করেছেন ঃ ‘লা ইলাহা ইলালাহ’র উপকারিতা
হচ্ছে এর অর্থসহ সেই ইলমে ইয়াকীনী বা নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা যা
(কি অস্বীকার করা হয় আর কি সাব্যস্ত করা হয় তা) সহ জানা
আলাহ ওয়াজিব করে দিয়েছেন। ওয়াজির আবুল মুজাফফর ইফছাহ নামক
গ্রন্থে বলেছেনঃ লা ইলাহা ইলালাহর স্বাক্ষ্য দানের দাবী হচ্ছে,
স্বাক্ষ্যদানকারীর অবশ্যই ‘লা ইলাহা ইলালাহ’ (আলাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই) সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। যেমনটি পূর্বের আয়াতে বলা
হয়েছে।
তিনি আরো বলেনঃ আরবী গ্রামারের দৃষ্টিতে শব্দের পরে আলাহ শব্দের
পেশ হওয়ার দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, উলুহিয়্যাত (ইলাহ হওয়ার
যোগ্যতা) একমাত্র আলাহর জন্যই নির্দিষ্ট। অতএব আলাহ তায়ালা ছাড়া
অন্য কেউ উলুহিয়্যাতের হকদার হতে পারে না। তিনি বলেনঃ এখানে
সারকথা হচ্ছে, তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আলাহর প্রতি ঈমান পোষণ
করা উভয় বিষয়ই এ কালেমার অন্তর্ভূক্ত এ কথাটি জেনে নেয়া।
তাগুতের ক্ষেত্রে আপনার উলুহিয়্যাতের অস্বীকৃতি আর আলাহর জন্য
উলুহিয়্যাতের স্বীকৃতি দ্বারা আপনি তাদের অন্তর্ভূক্ত হলে, যারা তাগুতকে
প্রত্যাখ্যান করেছে আর আলাহর প্রতি (ইলাহ হিসেবে) ঈমান এনেছে।
(আদ দার“ সুন্নাহ)
শাইখ আব্দুলাহ বিন আবদির রাহমান আবা বাতিন (রহঃ) বলেনঃ
আলাহ তায়ালা বলেছেনঃ
অর্থ: “বস্তুতঃ সকল মানুষের জন্য এটা একটা পয়গাম। আর এটা পাঠানো
হয়েছে এ জন্য যে, এর দ্বারা তাদেরকে সাবধান করা হবে এবং তারা
জেনে নিবে যে, প্রকৃতপক্ষে ইলাহ শুধু একজনই, আর বুদ্ধিমান লোকেরা
যেন চিন্তা-ভাবনা করে।” (ইবরাহীম, ১৪ঃ ৫২)
উপরোক্ত আয়াতে (যাতে তারা বলে, প্রকৃত
পক্ষে ইলাহ একজনই) বলা হয়নি। আলাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
অর্থ: “যারা জেনে শুনে সত্যের স্বাক্ষ্য দিয়েছে তাদের কথা ভিন্ন।”
অর্থাৎ তারা অন্তরে যা জানে তাই মুখে স্বাক্ষ্য দিয়েছে। রাসুল (সঃ)
বলেছেনঃ “আলাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই” এ কথা জানা অবস্থায় যে
মৃত্যুবরণ করেছে সে জান্নাতে যাবে। এসব আয়াত দ্বারা ওলামায়ে কেরাম
এটাই প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের ওপরে সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে
আলাহকে জানা। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে, যে
সবচেয়ে বড় ফরজ হচ্ছে “অর্থ সহ লা-ইলাহা-ইলালাহর জ্ঞানার্জন আর
সবচেয়ে বড় মূর্খতা হচ্ছে অর্থসহ লা-ইলাহা ইলালাহর জ্ঞান না থাকা।
অতএব অর্থসহ কালেমার জ্ঞান লাভ যেমনি ভাবে সবচেয়ে বড় ওয়াজিব,
তেমনিভাবে কালেমার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতা হচ্ছে বড় মূর্খতা।
শাইখ মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহহাব বলেছেন, অর্থ জানা ব্যতীত এবং
কালেমা (লা-ইলাহা- ইলালাহ) এর দাবী মোতাবেক কর্ম সম্পাদন ব্যতীত
শুধুমাত্র শাব্দিক স্বাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না, বরং এ
মৌখিক স্বাক্ষ্য আদম সন্তানের বির“দ্ধে একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত।
অবশ্য যারা শুধু মৌখিক স্বীকৃতিকে ঈমান বলে থাকে যেমন কাররামিয়া
সম্প্রদায় এবং যারা আন্তরিক স্বীকৃতি ও বিশ্বাসকে ঈমান বলে যেমন
জাহামিয়া সম্প্রদায়, তারা এ মতের বিরোধিতা করে।
আলাহ তায়ালা মুনাফিকদের কর্ম ও দাবীর ব্যাপারে তাদের মৌখিক স্বাক্ষ্য
প্রদানকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেছেন। অথচ স্বাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বাক্যের
মধ্যে তারা কয়েক ধরণের “তাগিদ” (বসঢ়যধংরং) ব্যবহার করেছেন।
আলাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
কুরআনের পঞ্চম সাক্ষীঃ
অর্থ: “আপনার কাছে মুনাফিকরা যখন আসে তখন বলেঃ আমরা স্বাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আলাহর রাসূল। আলাহ জানেন যে, আপনি
অবশ্যই আলাহর রাসুল। আর আলাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা
অবশ্যই মিথ্যাবাদী”। (মুনাফিকুন, ৬৩ঃ ১)
মুনাফিকরা তাদের মৌখিক স্বাক্ষ্যকে আরবী গ্রামারের দৃষ্টিকোন থেকে
তিনটি- (নিশ্চয়ই) (অবশ্যই) এবং (বিশেষ্য প্রধান
বাক্য) এর মাধ্যমে তাগিদ (বসঢ়যধংরং) ব্যবহার করেছে। আলাহ
তায়ালাও তাদের স্বাক্ষ্যকে বাক্যের মধ্যে হুবহু তাগিদ (বসঢ়যধংরং)
দিয়ে মিথ্যা আখ্যায়িত করেছেন। এর সাথে সাথে তাদেরকে বিশ্রী
উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাদের ভয়ংকর ও বীভৎস
জ্ঞানের কথা বলেছেন। এ তথ্যের মাধ্যমে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে
যে, ঈমান নামটির মধ্যে অবশ্যই আন্তরিক স্বীকৃতি এবং তদানুযায়ী
আমল (কর্ম) পাওয়া যেতে হবে।
যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইলালাহর স্বাক্ষ্য দিলো আবার গাইর“লাহর (আলাহ
ছাড়া অন্যকিছু) ইবাদত করলো, তার এ স্বাক্ষ্যের কোনো মূল্য নেই, যদিও
সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং ইসলামের কিছু কাজ কর্ম করে। যে
ব্যক্তি কিতাবের (ইসলামের) কিছু মানবে আর কিছু মানবে না তার
উদ্দেশ্যে আলাহ তায়ালা বলেনঃ
অর্থ: “তোমরা কি কিতাবের কিছুঅংশ বিশ্বাস করো আর কিছুঅংশ
অবিশ্বাস করো?” (বাক্বারা,২ঃ ৮৫)
দ্বিতীয় শতর্ ঃ (দৃঢ় বিশ্বাস) ঃ
তাওহীদ (আলাহর একাত্ববাদ) জানার পর এবং লা-ইলাহা ইলালাহর অর্থ
জানার পর এ কালেমার প্রতি বান্দার দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। এবং এর
দ্বারা সব ধরণের ইবাদত যে একমাত্র আলাহরই উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে
হবে এ কথার প্রতিও তার দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। এ কালেমা দ্বারা যা
বুঝানো হয়েছে সে ক্ষেত্রে বান্দার অন্তরে কোনো ধরণের দ্বিধা ও সন্দেহ
থাকতে পারবে না। আলাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
“প্রকৃতপক্ষে মুমিন তো তারাই, যারা আলাহ ও তার রাসূলের (সঃ) প্রতি
ঈমান এনেছে, অতঃপর কোন সন্দেহ পোষন করেনি এবং জানমাল দিয়ে
আলাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠ লোক।”
(হুজুরাত, ৪৯ঃ ১৫)
-
অর্থ: “সহীহ হাদীসে নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ যে বান্দা স্বাক্ষ্য
দেয়, “আলাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ) (সঃ)
আলাহর রাসুল” আর এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ না করে আলাহর
সাথে সাক্ষাত করে (মৃত্যু বরণ করে), তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।” (মুসলিম, হাদীস নং ৪৪-৪৫)
তৃতীয় শর্তঃ (গ্রহণ করা) ঃ
তাওহীদ জানার পর লা-ইলাহা ইলালাহর অর্থ জানা এবং তঁার প্রতি দৃঢ়
বিশ্বাস স্থাপন করার পর কালেমাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে হবে কোনো
প্রকার ইবাদতের মাধ্যমেই তা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। অর্থাৎ কোনো
প্রকার ইবাদতই তাওহীদের পরিপন্থি হবে না।
“এসব লোকেরা এমন ছিলো যে, তাদেরকে যখন বলা হতোঃ “আলাহ
ছাড়া কোনো ইলাহ নেই“ তখন তারা অহংকারে ফেটে পড়তো। তারা
বলতোঃ আমরা এক পাগল কবির কথায় নিজেদের মাবুদগুলোকে
পরিত্যাগ করবো? ” (সাফফাত, ৩৭ঃ ৩৫-৩৬)
কেউ যদি তাওহীদ সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে জানার পরে গ্রহন না করে তার
অবস্থা হবে ঊপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত মুশরিকদের মত।
চতুর্থ শর্তঃ (সমর্পন করা) ঃ
তাওহীদ জানার পর, লা ইলাহা ইলালাহর অর্থ, এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস
স্থাপন, ইবাদতের মাধ্যমে কালেমা গ্রহণ করার পর অবশ্যই লা ইলাহা
ইলালাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করতে হবে। এ সমর্পন হবে সকল
তাগুতের সাথে কুফরী করার মাধ্যমে এবং তাগুত থেকে নিজেকে মুক্ত
করার মাধ্যমে, এক আলাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মাধ্যমে। আলাহ
তায়ালা ঘোষণা করেছেনঃ
অর্থ: “না, হে মুহাম্মদ, তোমার রবের নামে কসম, তারা কিছুতেই
ঈমানদার হতে পারেনা, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে
তোমাকে ন্যায়বিচারক হিসেবে মেনে নিবে। অতঃপর তুমি যাই ফয়সালা
করবে সে ব্যাপারে তারা নিজেদের মনে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করবে না বরং
ফয়সালার সামনে নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পন করবে।” (নিসা : ৬৫)
তৃতীয় শর্ত ও চতুর্থ শর্তের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, তৃতীয় শর্ত
(কবুল) কথার মধ্যে, আর চতুর্থ শর্ত (ইনকিয়াদ) হচ্ছে কর্মের মধ্যে।
আলামা আবদুর রহমান বিন হাসান আল শাইখ (রহঃ) বলেছেনঃ ইসলাম
শুধুমাত্র একটি দাবী এবং মৌখিক উচ্চারণের নাম নয়। বরং ইসলামের
অর্থ হচ্ছে আলাহর একত্বকে মেনে নেয়ার মাধ্যমে আলাহর কাছে নিজেকে
সমর্পণ ও সোপর্দ করা, একমাত্র আলাহর রবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতের
কাছে আত্নসমর্পন করা (আলাহ ছাড়া অন্য কিছুর রবুবিয়্যাত ও
উলুহিয়্যাতকে অস্বীকার করা)। যেমনটি আলাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেনঃ
অর্থ: “যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো এবং আলাহর প্রতি ঈমান
আনলো, সেই শক্ত রজ্জু আকড়ে ধরলো।” (বাক্বারাহ, ২ঃ ২৫৬)
আলাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
অর্থ: “বস্তুত সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা একমাত্র আলাহর। তিনি নির্দেশ
দিয়েছেন, স্বয়ং তঁাকে ছাড়া তোমরা কারো দাসত্ব ও বন্দেগী করবে না।
এটাই সঠিক ও খাটি জীবন বিধান। কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানেনা।”
(ইঊসুফঃ ৪০) (আদ্ দুরার আস্ সুন্নিয়া কিতাবুত তাওহিদ ২/২৬৪পৃঃ)
পঞ্চম শর্তঃ (সত্যতা) ঃ
তাওহীদ, লা-ইলাহা ইলালাহর অর্থ জানার পর এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, তা
মনে প্রাণে কবুল করা, এর প্রতি নিজেকে সমর্পন করার পর অবশ্যই
বান্দাকে কালেমার ক্ষেত্রে স্বীয় সত্যতাকে প্রমাণ করতে হবে।
হাদীসে নবী (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তিই সত্যনিষ্ঠ অন্তরে স্বাক্ষ্য
দিবে যে আলাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মদ (সঃ) আলাহর
বান্দা ও রাসুল, আলাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে
দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম-হাদীস নং ৫৩)
রাসূল (সঃ) আরো ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি সত্যতার সাথে খঁাটি অন্ত
রে লা ইলাহা ইলালাহ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আহমদ)
যে ব্যক্তি এ কালেমা শুধু মুখে উচ্চারণ করবে কিন্তু এ কালেমা দ্বারা যা
বুঝানো হয় তা যদি অন্তরে অস্বীকার করে তবে সে নাজাত (মুক্তি) লাভ
করতে পারবে না, যেমনটি আলাহর বর্ণনা অনুযায়ী মুনাফিকরা লাভ
করতে পারবে না। মুনাফিকরা শুধু মুখে বলেছিলোঃ
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি অবশ্যই আলাহর রাসূল” এর জবাবে আলাহ
তায়ালা বললেনঃ
অর্থ: “আলাহও জানেন, আপনি অবশ্যই তঁার রাসূল। আর আলাহ সাক্ষ্য
দিচেছন যে মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।” (মুনাফিকুন, ৬৩ঃ ১)
এমনি ভাবে আলাহ তায়ালা অন্য আয়াতে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে বর্ণনা
করেছেনঃ
অর্থ: “আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা
আলাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার
নয়।” (বাক্বারা, ২ঃ ৮)
৬ষ্ঠ শর্তঃ (সততা ও একনিষ্ঠতা) ঃ
তাওহীদ, লা-ইলাহ ইলালাহর অর্থ, এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, অন্তর দিয়ে তা
গ্রহণ, এর কাছে নিজেকে সমর্পণ এবং ঈমানের সত্যতা যাচাই এর পর
বান্দাকে অবশ্যই কালেমার ব্যাপারে মুখলেস বা একনিষ্ঠ হতে হবে। আর
ইখলাস হচ্ছে বান্দার ইবাদত একমাত্র আলাহর জন্যই নিবেদিত হওয়া,
গাইর“লাহর জন্য ইবাদতের বিন্দুমাত্র অংশও নিবেদিত হবে না। আলাহ
তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থ: “তাদেরকে এ ছাড়া কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা খঁাটি মনে,
একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আলাহর ইবাদত করবে।” (বাইয়্যিনাহ, ৯৮ঃ ৫)
ইখলাসের মধ্যে এটাও অন্তভুর্ক্ত যে, বান্দা এ কালেমা কোনো ব্যক্তিকে
কেন্দ্র করে কিংবা কোনো ব্যক্তির সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বলবেও না আকড়েও
ধরবে না।
রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ ‘আলাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুন
হারাম করে দিয়েছেন, যে একমাত্র আলাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য লা-ইলাহা
ইলালাহ উচ্চারণ করেছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল (সঃ) আরো বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ অন্তরে বললো লা-
ইলাহা ইলালাহ সেই হচ্ছে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভের জন্য
সবচেয়ে সৌভাগ্যবান।’ (বুখারী)
সপ্তম শর্তঃ (ভালবাসা) ঃ
তাওহীদ জানার পর লা-ইলাহা ইলালাহ এর অর্থ, এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস,
অন্তর দিয়ে তা গ্রহণ, এর কাছে নিজেকে সমর্পন, ঈমানের সত্যতার
যাচাই, কালেমার ব্যাপারে একনিষ্ঠ হওয়ার পর বান্দাকে অবশ্যই
কালেমাকে মুহাব্বত করতে হবে। অন্তর দিয়ে কালেমাকে মুহাব্বত
করতে হবে, আর মুখে কালেমার প্রতি মুহব্বতকে প্রকাশ করতে হবে।
আলাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থ: “আর মানুষের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে যারা অন্যান্যকে আলাহর
সমকক্ষরূপে সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি মুহব্বত বা
ভালবাসা পোষণ করে, যেমন ভালবাসা উচিৎ একমাত্র আলাহকে। কিন্তু
যারা ঈমানদার আলাহর প্রতি তাদের ভালবাসা সবচেয়ে বেশী। আর
কতইনা ভাল হতো যদি এ জালেমরা পার্থিব কোনো কোনো আযাব
প্রত্যক্ষ করে অনুধাবন করে নিতো যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আলাহর
জন্য এবং শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে আলাহ অত্যন্ত কঠোর।” (বাক্বারা,
২ঃ ১৬৫)
শাইখ সুলাইমান বিন সামহান (রহঃ) বলেনঃ এ সব বিষয়ে কথা বলা এবং
জবাব দেয়ার পূর্বে আমি লা-ইলাহা ইলালাহর অর্থ, এবং উলামায়ে কেরাম
এ ব্যাপারে যা বলেছেন তা উলেখ করতে চাই। কালেমার সেই শর্তাবলীর
কথাও উলেখ করতে চাই যেসব শর্তাবলী পূরণ করা ব্যতীত কোনো
মানুষের ইসলাম সঠিক হবে না। একজন মানুষের মধ্যে যখনই এ
শর্তগুলোর সমাবেশ ঘটবে এর জ্ঞান, আমল ও ধ্যান ধারণার মধ্যে সমন্বয়
ঘটিয়ে এ কালেমাকে উচ্চারণ করবে, সাথে সাথে শাইখুল ইসলাম মুহাম্মদ
বিন আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) এর উলেখকৃত ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক
দশটি বিষয় থেকে সে মুক্ত থাকবে, তখনই তার ইসলাম সঠিক বলে
বিবেচিত হবে। কারণ, এটাই হচ্ছে কালেমার মূল, যার উপর ভিত্তি করে
এসব মাসআলার বিভিন্ন শাখা প্রশাখা এবং হুকুমের উদ্ভব হয়েছে। (আদ্
দুরার আস সুন্নিয়া কিতাবুত তাওহীদ)
আলামা শাইখ আবদুর রহমান বিন হাসান আল শাইখ বলেনঃ তুমি
কালেমার ব্যাপারে যা উলেখ করেছো তাতে আমি খুশী। তোমার
জানামতে, অধিকাংশ লোকই লা-ইলাহা ইলাহর অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ।
তাদের অবস্থা এই যে, যদি মুখে কালেমার কথা উচ্চারণ করে, তাহলে
অর্থের দিকটা অস্বীকার করে। তাই ছয়টি অথবা সাতটি বিষয়ে তোমাকে
খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এ ছয়টি বিষয়ের সমাবেশ ব্যতীত একজন
বান্দা কুফ্রী ও মুনাফেকী থেকে মুক্ত থাকতে পারেনা। একজন বান্দার
মধ্যে ছয়টি বিষয়ের সমাহার এবং তদানুযায়ী আমল করার মাধ্যমেই
সত্যিকারে মুসলিম হওয়া সম্ভব। তাই জ্ঞান, আমল, বিশ্বাস, গ্রহণ,
মুহাব্বত ও আনুগত্যের দিক থেকে বান্দার অন্তর ও জবানের মধ্যে
সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
অতএব একজন মুসলমানের জ্ঞান এমন হতে হবে, যেখানে মুর্খতার
অবকাশ নেই। তার ইখলাস হবে শিরক মুক্ত, সত্যতা হবে মিথ্যাচার মুক্ত,
তার চরিত্র হতে হবে শিরক এবং নিফাক মুক্ত। তার বিশ্বাস হতে হবে
সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত। সে কালেমা উচ্চারণ করবে অথচ তার মনে কালেমা
দ্বারা যা বুঝায় তার ব্যাপারে এবং এর দাবীগুলোর ব্যাপারে কোনো প্রকার
সংশয় থাকবে না। তার মনে থাকবে সেই ভালবাসা, যার মধ্যে থাকবে না
কোনো ঘৃণা, থাকবে এমন গ্রহণ যোগ্যতা যার মধ্যে থাকবে না কোনো
অস্বীকৃতি। সেই আরব মুশরিকদের মতো তার অবস্থা হবে না যারা
কালেমার অর্থ বুঝতো অথচ তা গ্রহন করেনি।
একজন মুসলিমের মধ্যে থাকা চাই সেই আনুগত্য, যার মধ্যে থাকবে না
শিরকের অস্তিত্ব, যে শিরকের উদ্ভব হয়েছে কালেমার দাবী, অপরিহার্য
বিষয় ও অধিকার পরিত্যাগ করার কারণে। কালেমার এসব দাবী ও
অপরিহার্য বিষয়গুলোর মাধ্যমেই বান্দার ইসলাম ও ঈমান পরিশুদ্ধ হয়।
উলেখিত বিষয়গুলোর প্রতিফলন যথার্থ ভাবে যার জীবনে ঘটবে, সে লা-
ইলাহা ইলালাহর অর্থ শিক্ষার ক্ষেত্রে তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে সক্ষম
হবে। সাথে সাথে সে তার জ্ঞান ‘প্রজ্ঞা’ ভাল-মন্দের বিচার বুদ্ধি, হেদায়াত
ও স্থিরতার সাহায্যে তার দ্বীনকে উপলদ্ধি করতে সক্ষম হবে।