মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রাণী জগতকে পবিত্র কুরআনে
বিভিন্নভাবে উলেখ করেছেন। পশুর কথা উলেখ করেছেন, পাখির কথা
উলেখ করেছেন, পানির ভেতর যে সকল প্রাণী থাকে তাদের কথাও উলেখ
করেছেন, মানুষের কথাও উলেখ করেছেন। পাখি সম্পর্কে আমরা আজকে
দুটি আয়াত তিলাওয়াত করছি। মহান আলাহ বলেন,
অর্থ: “তারা কি দেখে না আসমানে উড়ন্ত পাখি গুলোর দিকে, যারা শূন্য
আকাশে উড়তে থাকে তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কেউ সেখানে
রাখতে পারে না।” (সূরায়ে নাহল, আয়াত ৭৯)
যারা পেন তৈরী করেছে তারা এই পাখির উপর গবেষণা করেই কিন্তু
বিমান আবিষ্কার করেছে। তারা এই পাখির পেছনে কত যে ধাওয়া করেছে
তা আল্লাহই ভালো জানেন। পাখি কিভাবে উড়ে? সামনে কতটুকু অংশ,
পেছনে কতটুকু থাকে, তাদের পাখা গুলো কি কাজে লাগে? পেছনে যে
পড় আছে সেগুলো কিভাবে ব্যবহৃত হয় এই সব গুলো বিষয় গবেষণা
করে মানুষ বিমান তৈরী করেছে। বিজ্ঞানের এই সূত্র কিন্তু কুরআনেই দেয়া
আছে। মহান আল্লাহ বলছেন,
অর্থ: “তারা কি বিচরণকারী পাখি গুলোকে দেখে না, কখনো তারা ডানা
মেলে আবার কখনো ডানা গুটিয়ে ফেলে। রহমান আলাহর সাহায্য ছাড়া
কেউ সেখানে রাখতে পারে না। নিশ্চয়ই মহান আলাহ সব ব্যাপারেই
অবলোকন কারী এবং সম্যকদ্রষ্টা।” (সূরায়ে নাহল : ৭৯)
যারা বিমানে উঠেছেন এবং পাখার কাছে বসেছেন তারা খেয়াল করলে
দেখবেন বিমানের পাখায় অনেক গুলো সেল ও পার্ট আছে। বিমান যখন
চলা শুর“ করে তখন কিছু সেল ও পার্ট দাড়ায় আবার কিছু বসে যায়।
যখন বিমান অবতরণ করে তখন অনেক গুলো পাট খাড়া হয়ে যায়। মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাখি নিয়ে গবেষণ করতে বলেছেন যে কিভাবে
তারা তাদের ডানা মেলে আবার কিভাবে তা গুটিয়ে ফেলে। যেই সকল
পাখির গলা লম্বা সেগুলো পেছনে মাংস বেশি থাকে। ভারসাম্য বজায়
রাখার জন্য। জিরাফ এবং উটের পা যেহেতু লম্বা তাই তাদের গলাও
অনেক লম্বা করে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে তারা ঘাষ ও খাবার খেতে পারে।
পশুর মধ্যে যেমন অনেক প্রকার আছে, পাখির মধ্যেও অনেক গুলো প্রকার
আছে। কিছু পশু যেমন হিংস্র হয়, তেমনি পাখির মধ্যেও হিংস্র পাখি
আছে। যেসকল পাখি নখ ও দঁাত দিয়ে শিকার করে এবং নখ ও দঁাত
দিয়ে ছিঁড়ে ফুরে খায় সেগুলো খাওয়া হারাম। শুধু হিংস্র বা শুধু নখ দিয়ে
খায় সেগুলো খাওয়া যায়েজ। কিন্তু নখ ও ঠোট/দাত এই উভয়টা ব্যবহার
করে খায় সেগুলো খাওয়া যায়েজ হবে না। এরকমভাবে পশুর“ মধ্যে
যেগুলো হিংস্র বাঘ-ভলুক এগুলোও খাওয়া হারাম।
এক লোক বটগাছের নীচে শুয়ে চিন্তা করছিলো, বট গাছ এতো বড় বৃক্ষ
কিন্তু তার ফল গুলো কত ছোট ছোট। অপর দিকে তালগাছ, কাঠাল
গাছের মধ্যে গাছের তুলনায় ফলগুলো কত বড় বড়। এই অসামঞ্জস্য কেন
তাই সে ভাবছিলো। এমন সময় হঠাৎ একটি বট ফল তার মাথায়
পড়লো। তখন সে বুঝতে পারলো এবং বলে উঠলো যে, আলাহ তুমি
কতো দয়ালু। যদি আজকে বটগাছের ফল কাঠালের মতো হতো তাহলে
তো আজই আমি শেষ হয়ে যেতাম।
বটগাছকে মহান আলাহ সৃষ্টি করেছেন ছায়ার জন্য, পুঁজো করার জন্য
নয়। অনেকে এর পুঁজো করে। কি বিশাল ছায়া বটগাছের। কিন্তু তার ফল
গুলো ছোট। এজন্যই ইরশাদ হয়েছে,
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেকটি বস্তুকে তার পরিমাণ মতো, সুকল্পিতভাবে
সৃষ্টি করেছি।” (সূরায়ে কমার, আয়াত ৪৯)
মহান আলাহ রাব্বুল আলামীন যার জন্য যা যেখানে প্রয়োজন সেখানে
সেই জিনিষটি সৃষ্টি করেছেন। আলাহ মানুষের নাক দিয়েছেন তার মুখের
উপর। খাবার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট চলে আসে। এই নাক যে কোন
খাবারের ঘ্রাণ শুনে তাকে সার্টিফাইড করতে পারে যে, খাবার টি ভালো না
মন্দ। যদি নাক মাথার পেছনে হতো তাহলে কোন খাবার নিয়ে তা পরীক্ষা
করার জন্য মাথার পেছনে নিয়ে ধরতে হতো। তারপর অনুমতি পাওয়া
গেলে তখন সামনে এনে খাওয়া লাগতো। কিন্তু মহান আল্লাহ আমাদের
এতো কষ্ট দিতে চান নি। তাই তিনি নাককে ঠিক জায়গায় সৃষ্টি করেছেন।
এভাবে আল্লাহ তার অপর এক আয়াতে বলছেন,
অর্থ: “আল্লাহ রাব্বুল আলামী তোমাদের বিশ্রাম গ্রহণ ও আরাম করার
জন্য ঘর তৈরী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। (সফরে গেলে) পশুর চামড়া
দিয়ে তোমাদের জন্য অস্থায়ী তাবু ও ঘর তৈরী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাতে করে তোমরা অস্থায়ী সফর বা কোন খানে প্রয়োজনে
থাকতে পারো। আর এই সকল পশুর পশম, লোম ও চুল থেকে তোমরা
তোমাদের গরমের জন্য পোষাক ও আসবাবপত্র তৈরী করো। এছাড়াও
তোমরা আরো অনেক প্রয়োজন পূরণ করে থাকো। আর আলাহ
তোমাদের জন্য পাহাড় গুলোকে তৈরী করেছেন। তোমাদের জন্য পাজামা
তৈরীর ব্যবস্থা করেছেন। যার থেকে তোমরা পোষাক তৈরী করো এবং
তার তোমরা গরম থেকে বঁাচতে পারো। এভাবে তোমরা আরো এমন
কিছু পোষাক তৈরী করো যার দ্বারা তোমরা যুদ্ধের ময়দানে আত্মরক্ষা
করতে পারো (লোহার বর্ম, বুলেটপ্র“ফ পোষাক)। এভাবে মহান আলাহ
তার নেয়ামত গুলোকে তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যাতে করে
তোমরা মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল মুসলিম ও আত্মসমর্পনকারী
হতে পারো।” (সূরায়ে নাহল, আয়াত ৮০-৮১)
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ এই সকল প্রাণী এমনিতেই সৃষ্টি
করেন নি। এগুলোর প্রত্যেকটার দ্বারাই অনেক উদ্দেশ্য আছে। প্রাণী
জগতের মধ্যে সবচেয়ে ইতর প্রাণী যে, কুকুর এই কুকুর সম্পর্কেও পবিত্র
কুরআনে আলোচনা আছে। হাদীসেও আলোচনা আছে। কুকুরের
আলোচনা দ্বারাই আমি এখানে প্রাণী জগতের আলোচনা শেষ করতে চাই।
কুকুরের মধ্যে এমন কিছু গুণাবলী আছে যা অনেক মানুষের মধ্যেও নেই।
অর্থ: “কিছু লোক আছে কুকুরের মতো। কুকুরের মাথায় যদি বোঝা
চাপাও তাহলে সে জিহ্বা বের করে হাপাতে থাকে। আর যদি তার উপর
বোঝা নাও চাপাও তাহলেও সে হাপাতে থাকে। এটা হলো সেই সকল
লোকদের উদাহারণ যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে। সুতরাং
আপনি তাদের সামনে এই সকল ঘটনা বর্ণনা কর“ন, হয়তো তারা এ নিয়ে
চিন্তা-ভাবনা করবে।” (সূরায়ে আরাফ, আয়াত ) কুকুর সম্পর্কে
হাদীসের মাঝে আছে,
অর্থ: “নামাজের সামনে দিয়ে গাধা, মহিলা ও কালো কুকুর গমন করলে
নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫)
অবশ্য এ ব্যাপারে ফকীহদের মতে এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। কুকুর
সম্পর্কে সূরায়ে মায়েদার ৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
অর্থ: “শিকারী কুকুর তথা যেই কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তার দ্বারা
যদি তোমরা শিকার করো আনো তাহলে সেই শিকার খাওয়া হালাল।”
(সূরায়ে মায়েদা, আয়াত ৪)
কুকুরকে কিভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাও হাদীসে বলা হয়েছে।
বিসমিল্লাহ বলে কুকুরকে শিকারের উদ্দেশ্যে ছাড়তে হবে। অন্তত: তিন
দিন পর্যন্ত তাকে দিয়ে শিকার করে পরীক্ষা করতে হবে। সে শিকার
করে আনার পর তাকে খেতে দিতে হবে। যদি সে না খায় আপনার জন্য
রেখে দেয় তাহলে এভাবে তিনদিন প্র্যাকটিস করার পর বুঝতে পারবেন
যে আসলেই সে আপনার জন্য শিকার করেছে। তখন এই কুকুরের শিকার
করে আনা হরিণ, খরগোশ ইত্যাদি খাওয়া হালাল হবে। কারণ সেই
কুকুরটি শিক্ষিত হয়ে গেছে।
অর্থ: “হযরত আদী ইবনে হাতেম রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি
মহানবী সা. কে কুকুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। (ইয়া রাসূলুল্লাহ!
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের বিধান কি?)
তখন মহানবী সা. বললেন, যখন তুমি তোমার প্রশিক্ষিত কুকুরকে
বিসমিল্লাহ বলে ছেড়ে দিবে, তখন সেই কুকুর যদি শিকার করে আনে
তাহলে তুমি তা খেতে পারো। তবে যদি তোমার কুকুর সেই শিকারের
কিছু অংশ নিজে খেয়ে ফেলে তাহলে তুমি তা খেতে পারবে না। কারণ সে
ঐ শিকার তোমার জন্য নয় বরং নিজের জন্য করেছে।
এরপর সাহাবী আরো জিজ্ঞাসা করলেন, যদি প্রশিক্ষিত কুকুরের সাথে
অন্য কুকুরও দেখা যায় শিকার করে এনেছে তখন কি হবে?
মহানবী সা. বললেন, এমন হলে তুমি সেই শিকার খেতে পারবে না,
কারণ তুমি তো তোমার কুকুরকে বিসমিল্লাহ বলে ছেড়েছো, অন্য কুকুরের
ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলোনি।”(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৪০)
এই হাদীসের থেকে বুঝা যায় যে, কুকুরে মধ্যেও পার্থক্য আছে। শিক্ষিত
কুকুর আর অশিক্ষিত কুকুর। শিক্ষিত কুকুর শিকার করলে খাওয়া যায়েজ
আর অশিক্ষিত কুকুর শিকার করলে খাওয়া যায়েজ নেই। এমনকি শিক্ষিত
কুকুরে সাথে অশিক্ষিত কুকুর থাকলেও তা খাওয়া যাবে না। সুতরাং এর
থেকে শিক্ষার গুর“ত্ব যে কত বেশি তাও বুঝা যায়।
এটা তো গেলো কুকুরে বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত হাদীস। একইভাবে কুকুরের
ক্ষতিকর দিকও আছে। হাদীসের মাঝে ইরশাদ হয়েছে,
অর্থ: “হযরত আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. ইরশাদ
করেছেন, যেই ঘরে কুকুর বা কোন প্রাণীর ছবি থাকে সেই ঘরে রহমতের
ফিরিশতারা প্রবেশ করে না।”(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৪৪)
এজন্য ঘরে কুকুর পালা জায়েজ নেই। ঘড়-বাড়ি পাহাড়া দেয়া, সম্পদ
হেফাজত এমনি ক্ষেত পাহাড়া দেয়ার জন্য কুকুর প্রতিপালন করা যায়েজ
আছে। আরবের লোকেরা ছাগলের জন্য রাখাল রাখতো। রাখালের সাথে
একটি কুকুরও পালতো। অনেক সময় রাখাল ছেলের পরিবর্তে শুধু কুকুরই
ভালো পাহাড়াদারি করে। কারণ কুকুর সব ছাগল গুলোকে একসাথে
রাখতো। কোন ছাগল হারানোর কোন সুযোগ থাকে না কুকুর পাহাড়াদার
থাকলে। কুকুর পাহাড়াদার থাকলে সে ভালো পাহাড়াদার। তার দ্বারা
চোরদের সাথে আতাত করার সম্ভাবনা কম হয়। কারণ সে তার মনিবের
অকৃতজ্ঞ হয় না।
আলোচনা হচ্ছিলো প্রাণী জগত সম্পর্কে। এ বিষয়ে আরবী একটি কিতাব
আছে “হায়াতুল হায়াওয়ান”। এই বইয়ের ৪র্থ খন্ডে কুকুর অধ্যায়ে ৩৩৬
নং পৃষ্ঠায় কুকুর সম্পর্কে কিছু ভালো কথা আছে। একটা কুকুর সব সময়
তার মালিকের আনুগত্য করে। মালিক সামনে থাকলেও তার মঙ্গল কামনা
করে, আড়ালে থাকলেও তার মঙ্গল কামনা করে। মালিক তার প্রতি
খেয়াল রাখুক বা না রাখুক, কুকুর তার মনিবের প্রতি খেয়াল রাখে।
জাগ্রত কিংবা ঘুমন্ত উভয় অবস্থায়ও ঘোড়া এবং মাছরাঙ্গা পাখির চেয়েও
বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকে। রাতে ঘুমালেও সে গভীর ঘুমায় না। সে
দিনের বেলায় ঘুমায়, যখন তার পাহাড়াদারীর প্রয়োজন হয় না।
মালিকের মেহমান আসলে কুকুর তার ভাব-সাব দেখেই বুঝে নেয়। তখন
সে সম্মানিত মানুষদের সম্মান দিয়ে থাকে। মালিকের আপনজন কেউ
আসলে তাদের দেখে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে না। বরং সে তখন নিজের
লেজ নেড়ে নেড়ে তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে। রাস্তা ছেড়ে দেয়।
তবে সে যদি সন্দেহজনক কাউকে দেখলে ঘেউ ঘেউ শুর“ করে।
কুকুর তার মালিকের কাছে গিয়ে লেজ নাড়ার মাধ্যমে মালিকের আনুগত্য
প্রকাশ করে থাকে। তাকে মারলে বা পিটালেও সে একটু পরে আবার চলে
আসে। কুকুর যখন তার মালিকের সাথে খেলে তখন সে কামড় দিলেও
সেই কামড়ে ব্যাথা থাকে না। কারণ সে আস্তে কামড় দেয়। তাকে
প্রশিক্ষণ দিলে সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। কুকুরে পিঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে
তার সামনে খাবার দিলে সে খাবারের দিকে যাবে না। কিন্তু তার পিঠ
থেকে মোমবাতি সরিয়ে নিলে তখন সে যাবে।
)
ইমাম হাসান বসরী রহ. তিনি কুকুরের ১০ টি বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রতিটি
মু’মিনের মধ্যে থাকা প্রয়োজন।
১.
কুকুর সব সময়ে মালিককে যেমন ভালোবাসে তেমনি ভয়ও করে। -
মুমিনের মধ্যেও আল্লাহর ব্যাপারে ভয় এবং আশা রাখা উচিত।
কুকুরের জন্য থাকার কোন আলাদা স্থান থাকে না। -যদি কেউ বানিয়ে
দেয় তাহলে তা ভিন্ন কথা। কিন্তু সাধারণত: সে সাধারণ স্থানেই থাকে।
কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। -মুমিনদেরও (এই পৃথিবীতে স্থায়ী বলে কিছু
নেই) এমনভাবে থাকা দরকার।
এ ব্যাপারে একটি মজার ঘটনা আছে। ৭০ বছর বয়সী এক লোক একবার
একটি জমি ১০০ বছরের জন্য লীজ নিলো। এই খবর যখন হযরত হাসান
বসরী রা. এর কাছে এসে পৌছালো তখন তিনি বললেন, মনে হয় এই
ব্যক্তির সাথে আজরাইলের একটি চুক্তি হয়েছে। কারণ তার ৭০ বছর
বয়স হয়ে গেছে এখন কবরে যাওয়ার সময় আর সে ১০০ বছরের জন্য
জমি লীজ নিয়েছে।
৩.
কুকুর রাতের বেলায় কম ঘুমায়। -মুমিন ও নেক্কারদের এমনহওয়া
উচিত।
৪.
কুকুর মারা গেলে ওয়ারিস সূত্রে তার কোন সম্পত্তি থাকে না। -আলাহ
ওয়ালাদের এমন হওয়া উচিত।
৫.
কুকুরকে যদি তার মালিক মারে এবং পিটায় তারপরও কিন্তু কুকুর
কখনোই তার মালিককে ছেড়ে চলে যায় না। বরং একটু দূরে গেলেও
আবারও ফিরে আসে এবং মালিকের দরবারে ধর্না দেয়। -এটাই হওয়া
উচিত একজন মুমিনের তার রবের সাথে সম্পর্ক। কোন অবস্থাতেই সে
যেনো তার রবের কাছ থেকে দূরে না যায়। যদি আলাহর পক্ষ থেকে
কোন বিপদ-আপদও তার উপর আসে কিন্তু তারপরও সে যেন মাফ চেয়ে
রবের কাছেই ধর্না দেয়।
৬.
কুকুর সামান্য খাবার ও সামান্য স্থানেই খুশি। -আলাহর কাছে যারা বিনয়ী
হতে চায় এটা তাদের জন্য আবশ্যক।
৭.
যদি কুকুরকে কেউ মেরে তার স্থান থেকে ভাগিয়ে দেয়, তাহলে সেই
লোক চলে যাওয়ার পর কুকুর আবারও তার স্থানে ফিরে আসে। -এটা
মুমিনের গুন হওয়া উচিত।
৮.
যদি কুকুরকে অপমান করে, দুর দুর করে তারিয়ে দেয়া হয় তাহলেও
কুকুর এটা সহ্য করে নেয়। কোন প্রতিবাদ করে না।
৯.
কুকুরের সামনে খাবার দিলে সে দূরে থেকে ধীরে ধীরে খাবারে কাছে এসে
বসে এবং আস্তে আস্তে খাবার গ্রহণ করে। -এটাও মুমিনদের গুন
হওয়া উচিত যে সে খাবারের আদব বজায় রাখবে।
১০.
নতুন কেউ এলে কুকুর তার পিছু নেয় না, কিন্তু তাকে ফলো করে। -
মুমিনদের জন্যও এটা প্রয়োজন যে সে সর্বদা আলাহর ইবাদত করবে
আবার নিজের কোন ভুল হচ্ছে কি না তাও লক্ষ্য রাখবে।
এজন্যই একবার হযরত উমর রা. একজন গ্রাম্য লোককে দেখলেন যে, সে
একটি কুকুর নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলে তোমার সাথে এটি কি?
তখন লোকটি বললো, হে আমীর“ল মু’মিনীন এ আমার খুবই বিশ্বস্ত
বন্ধু। যদি আমি তাকে কিছু খাবার দেই, তবে সে শুকরিয়া আদায় করে।
আর যদি আমি তাকে না দেই, তবে সে ধৈর্য্য ধারণ করে। তখন হযরত উমর রা. মুচকি হেসে বললেন, আসলেই ভালো সঙ্গী। (তুমি একে রাখতে
পারো।)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এক লোকের সাথে একটি কুকুর
দেখলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন এটি কি? তখন সেই লোকটি
বললো, এ সব সময় আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আমার গোপন তথ্য
গুলো হেফাজত করে ফাস করে দেয় না। আমার কর্মচারী আজকে ভালো,
কালকে বলে দেয় কিন্তু এ কখনো এমনটি করে না।
হযরত আহনাফ ইবনে তাইফ নামক এক ব্যক্তি বলেন, কুকুর যখন
তোমার সামনে লেজ নাড়ায় তখন তুমি তাকে বিশ্বাস করতে পারো। কিন্তু
মানুষ যদি তোমার সামনে লেজ নাড়ে, দেড় হাত লম্বা সালাম দেয়
তাহলেই কিন্তু তুমি তাকে বিশ্বাস করো না, সে তোমার ক্ষতি করতে
পারে, তার থেকে সতর্ক থাকো।
হযরত ইমাম শা’বী রহ. বলেন, তুমি কুকুর সম্পর্কে মনে রাখো যে, তার
মহব্বতের মধ্যে কোন মুনাফেকি নেই। যদি সে তোমাকে মহব্বত করে
তাহলে সে খালেস মহব্বত করবে তোমার সাথে মুনাফেকি করবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একটি আমানতদার কুকুর
খেয়ানতকারী বন্ধু থেকে ভালো।
হযরত মালেক ইবনে দীনার রহ. বলেন, খারাপ বন্ধুর চেয়ে একটি কুকুর
আমার জন্য ভালো।
কুকুর সম্পর্কে এমন অনেক ঘটনা আছে যে, তার মালিক মারা যাওয়ার
পর কুকুরটিও মালিকের শোকে তার কাঁদতে কাঁদতে মারা গেছে।
বিভিন্ন প্রাণী সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থ: “আসমান এবং যমীনের সকল বস্তুই মহান আল্লাহর নামে তাসবীহ
পড়ে। কিন্তু তোমরা তা বুঝো না।” (সূরা ইসরা, আয়াত ৪৪)।
এজন্যই আমরা প্রাণী জগত নিয়ে আলোচনা করছিলাম। যে কিভাবে এই
প্রাণী জগত মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ ও পরিচয় বহন করে। মহান
আল্লাহ আমাদেরকে এই সকল প্রাণীদের দ্বারা তার পরিচয় দিয়েছেন।
যারা কুরআন এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে তারা এক সময়
স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, মহান আলাহর সকল সৃষ্টিই প্রয়োজনীয়।
যেমন ইরশাদ হয়েছে,
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণ
করে এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে তারা বলে হে আমাদের রব
তুমি কিছুই অহেতুক সৃষ্টি করো নি। পবিত্র ও সুমহান তুমি আমি তোমার
পবিত্রতা ঘোষণা করছি সূতরাং তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব
থেকে রক্ষা করো।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)।
এই আয়াতের দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে, এই পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই
বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। হাদীসের
মাঝেও মহানবী সা. এক স্থানে মহান আল্লাহর কথা এভাবে ইরশাদ
করেন, “মহান আল্লাহ বলেন, আমি দুনিয়ার সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেছি
মানুষের উপকারের জন্য, খেদমতের জন্য আর মানুষকে সৃষ্টি করেছি
আমার আনুগত্য ও ইবাদত করার জন্য। সুতরাং তোমরা যদি আলাহর
গোলামী করো, তার ইবাদত করো, তাহলে সমগ্র মাখলুকাত তোমাদের
গোলামী করবে। মহান আল্লাহ বাতাস সৃষ্টি করেছেন আমাদের জন্য,
আলো সৃষ্টি করেছেন আমাদের জন্য, সমস্ত প্রাণী গুলোকে সৃষ্টি করেছেন
আমাদের জন্য। তোমরা যদি আমার আনুগত্য করো তাহলে এগুলো সব
তোমাদের খেদমতে লাগলে। আর তোমরা আমার বির“দ্ধাচারণ করলে
এগুলো সব তোমাদের বির“দ্ধে যাবে।
এখন আমি যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচন করতে চাই সেটি হচ্ছে এই
সুবিশাল পৃথিবী, এই যমীন। এই যমীনের মাঝেও মহান আলাহর পরিচয়
নিহীত আছে। মহান আল্লাহ বলছেন,
অর্থ: “আল্লাহ তো তিনিই যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন
প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এরপর তার মাঝে পাহাড় দিয়ে পেড়েকের
ব্যবস্থা করেছেন। নদী-নালা ও নহর সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন রকম ফল তৈরী
করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। দিনকে রাত দিয়ে রাতকে দিন দিয়ে পরিবর্তন
করেন। এই সব কিছুর মধ্যে আয়াত ও নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল ও
গবেষকদের জন্য।” (সূরা রা’দ, আয়াত ৩)।
এগুলো আসলেই বুদ্ধিমান লোকের কাজ। বোকাদের কাজ নয়। বিশাল
ক্ষেত দেখে কৃষকের কথা ভুলে যাওয়া যেমন বুদ্ধিমান লোকের জন্য
অসম্ভব তেমনি এই বিশাল সৃষ্টিজগত দেখে মহান আল্লাহকে চিনতে না
পারা কেবলমাত্র বোকাদের জন্য মানায় কোন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লোকের
জন্য এটি সাজে না। এজন্যই আমি আগে বলেছিলাম জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীরা
কখনো নাস্তিক হতে পারে না। ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত
আলোচনা সামনে আসবে। এজন্যই ইমাম একটি ঐতিহাসিক উক্তি আছে,
অর্থ: “জনৈক আরব ব্যক্তিকে মহান আলাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা
করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কি আশ্চর্য্যের বিষয়, যদি বিষ্ঠার দ্বারা
তার প্রাণীর অস্তিত্বের উপর প্রমাণ বহন করতে পারে, মর“ভূমির বালুর
উপর পায়ের ছাপ যদি সেখান দিয়ে হেটে যাওয়া মুসাফিরের লক্ষ দিতে
পারে, তবে গ্রহ-নক্ষত্রে পরিপূর্ণ এই আকাশ, গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি
পরিপূর্ণ এই ধরণী, তুফানে পরিপূর্ণ সাগর ও নদী-নালা কিভাবে এগুলোর
সৃষ্টিকারী এক মহাসৃষ্টিকারীর পরিচয় বহন করে না?” (তাফসীরে ইবনে
কাসীর, প্রথম খন্ড ১৯৭ পৃষ্ঠা)
এজন্যই আল্লাহ এই যমীন নিয়ে আলোচনা করতে বলেছেন,
অর্থ: “আর যমিনের বহু স্তর আছে যা একটার সাথে আরেকটি লেগে
আছে। যমীনের মধ্যে রয়েছে অনেক বাগ-বাগিচা। আঙুর ও ফসলের
বাগান (ধান-গম এমনভাবে হাজারো ফসলের)। খেজুর বাগান -এক শাখা
ও বহু শাখা বিশিষ্ট। অথচ এগুলো একই পানি থেকে সেচের মাধ্যমে তৈরী
হয়। অথচ একটির স্বাদের থেকে অন্যটির স্বাদ আরো ভিন্ন। নিশ্চয়ই এর
মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা রা’দ, আয়াত
৪)।
অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলছেন,
অর্থ: “আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। এর উপর আমি পাথরের পাহাড়
দিয়ে পেড়েকের ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং সব জিনিষ গুলোকে আমি
পরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি। আর আমি তোমাদের জন্য এই যমীনের মধ্যে
তোমাদের জন্য জীবিকা রেখেছি এবং এখানে অনেক প্রাণী আছে
যাদেরকে তোমরা রিযিক দাও না, আমিই তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে
থাকি।” (সূরা হিজর, আয়াত ১৯-২০)।
এভাবে মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এমনকি মানুষের মধ্যে কতো মানুষ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কিন্তু কোন
একজন মানুষের হাতের রেখার সাথে অন্য কোন মানুষের হাতের রেখার
কোন মিল নেই যা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। একইভাবে একজন মানুষের
দেহের ঘ্রাণ ও গন্ধের সাথে আরেকজন মানুষের ঘ্রাণ ও গন্ধের কোন মিল
নেই। একজনের চেহারার সাথে আরেকজনের চেহারার মিল নেই। কি
আজব সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ। এই সব যিনি দিয়েছেন তিনিই হলেন সেই
রব। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফীক দিন। আমীন।