আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু মানুষের জন্যই নয়। বরং সকল
মাখলুকাতেরই ব্যবস্থা করছেন। ডিম থেকে হাস, মুরগী, কুমীর, কচ্ছপ,
সাপসহ অনেক প্রাণীর বাচ্চা হয়ে থাকে। আপনার দেখবেন ডিমের ভেতর
দু’টি অংশ থাকে। একটি হলো সাদা, অপরটি হলুদ বা লাল। বিজ্ঞান
আবিষ্কার করেছে ডিমের হলুদ অংশ দিয়ে বাচ্চা তৈরী হয়। ডিমের
ভেতরে তো আর তার মায়ের নাভির সাথে সম্পর্ক দেয়া সম্ভব নয়, এখানে
তার খাবারের ব্যবস্থা হবে কিভাবে? মহান আল্লাহ এখানে তার খাবারের
ব্যবস্থা করলেন ডিমের অবশিষ্ট্য সাদা অংশ দ্বারা। এভাবে যখন ডিমের
ভেতর বাচ্চা বড় হয়ে গেলো, ডিমের ভেতরের সাদা খাবার শেষ হয়ে
গেলো তখন আল্লাহ তাকে জ্ঞান দিলেন এবার তুমি দুনিয়াতে আসতে
পারে। দুনিয়াতে আসার জন্য তুমি তোমার ঠোট দ্বারা তোমার চারপাশের
প্রাচীরে আঘাত করো। এটা কোন চীনের মহাপ্রাচীর নয়। তুমি আঘাত
করলে তা ভেঙ্গে যাবে। বাচ্চা তখন ডিমের ভেতর বসে সমানভাবে
চারপাশে আঘাত করতে থাকে। একটা পর্যায়ে যখন চতুর্পাশ্ব দূর্বল হয়ে
যায় তখন সে মাথা দিয়ে উপর দিকে ধাক্কা দেয়। উপরের ছাদ সরে যায়,
সে দুনিয়াতে বেড়িয়ে আসে।
দুনিয়াতে আসার পর মনে হয় সে কি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। মুরগীর বাচ্চা যখন
চিল দেখে তখন তার মা একটি আওয়াজ করলে সে দৌড়ে এসে তার
মায়ের আচলের নিচে আশ্রয় নেয়। মুরগীর বাচ্চা আর হাসের বাচ্চা একই
সাথে বড় হলেও আপনারা দেখবেন যে, হাসের বাচ্চা যখন পানি দেখে
তখন সে আনন্দে নেচে ওঠে। সঁাতার কাটতে শুর“ করে। তার মনে কোন
ভয় নেই। সে মনে করে যে পানি মনে হয় তার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে মুরগীর বাচ্চা পানির কাছে নিয়ে যান, পানিতে নামবে? মরতে
রাজি কিন্তু পানিতে নামতে সে রাজি হবে না। কে তাকে শিক্ষা দিলো যে,
পানি তার জন্য উপযুক্ত নয়? কে তাকে বোঝালো যে, তুমি পানিতে নামবে
না। পানিতে নামলে তোমার ক্ষতি হবে। যিনি তাকে এই শিক্ষা দিয়েছেন
তিনিই হলেন সেই রব।
শীতকালে শীতপ্রধান দেশগুলোতে যখন অধিক ঠান্ডার কারণে পানি বরফ
হয়ে যায়, অতিথী পাখীদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করা
এবং সেখানে থাকা যখন কষ্টকর হয়ে যায় তখন তারা সেখান থেকে হজরত করে। বাংলাদেশের হাওড়-বাওর খাল-বিলে চলে আসে। আনন্দে
নেচে-গেয়ে একেবারে মাতিয়ে তোলে। তাদের জন্য সরকারও নিরাপত্তা
দিয়েছে। কেউ এই সকল পাখি শিকার করলে তার জন্য শাস্তি আছে।
এরপর যখন শীত চলে যায় তখন কি এরা এখানে বসে থাকে? না। তারা
আবার তাদের আগের স্থানে চলে যায়। কে তাদেরকে এই জ্ঞান দান
করেছেন? -তিনিই সেই রব।
একটি বাবুই পাখি যখন তালগাছে বাসা বঁাধে তখন কি সুন্দর করে তারা
বাসা বানায়। বাসা বানানোর পর যাতে করে স্ত্রীর মুখ দেখা যায় সেজন্য
কঁাদা দিয়ে তা রং করে। এরপর জোনাকি পোকা দিয়ে আলোর ব্যবস্থা
করে। কারণ সেখানে তো আর বিদুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বিদুৎ সাপাই
দেয়া হবে না।
এইভাবে আপনারা দেখবেন যে প্রত্যেকটা প্রাণী যার যা প্রয়োজন মহান
আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি আমাদের দেশের কুকুর
গুলোর গায়ে পশম কম। বিদেশের কুকুরগুলির গায়ে পশম বেশী থাকে।
কেন? কারণ সেখানে শীত বেশি। শীতের সময় মানুষ যখন কম্বল গায়ে
দিয়ে শীত নিবারণ করে কুকুর গুলোর গায়ে কম্বল পড়াবে কে?
সুবহানালাহ মহান আলাহ তাদের শরীরে পশম বাড়িয়ে দিয়ে তাদের জন্য
স্থায়ী কম্বলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমাদের দেশের কুকুরদেরও যদি
এরকম বেশী পশম থাকতো তাহলে গরমের দিন মহিষ যেমন পানিতে
সঁাতরায় তেমনি কুকুর গুলোকেও পানিতে সঁাতরাতে হতো।
হায়াতুল হায়াওয়ান বইতে দেখলাম, ঘোড়ার ঘাড়ে যে পশম কেন এই
পশম? এই পশম গুলো দিয়ে সে গরম নেয়। একইভাবে ইঁদুরের যে লম্বা
লেজ এই লেজ দিয়ে সে তার শরীরের এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা করে।
যখন তাপ বেড়ে যায় তখন সে এই লেজ দিয়ে তার শরীরের অতিরিক্ত
তাপ বাহির করে দেয় আবার যখন তাপ কমে যায় তখন সে এই লেজ
দিয়ে তার শরীরে তাপ বাড়ায়। কি সুন্দর ব্যবস্থা মহান আল্লাহ করে
দিয়েছেন। এজন্যই বলা হয়েছে।
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি জগত সমূহের রব।”
অর্থাৎ মহান আলাহ স্থলভাগ, আকাশ, সমূদ্র ও পানি জগতসহ সকল
জগতের রব। ধারাবাহিকভাবে এগুলো আলোচনায় আসবে। মহান
আল্লাহও এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বলেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
.
অর্থ: “যারা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে, (তারা বলে) হে আমাদের
রব তুমি কিছুই অহেতুক সৃষ্টি করো নি। আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা
করছি। তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো।” (সূরা
আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)।
তাই যে সকল জ্ঞানীরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করে দেখবেন তারা
অবশেষে কুরআনের সামনে নত হয়ে আসেন। বহু বিজ্ঞানীদের মত আছে
স্রষ্টা সম্পর্কে। এজন্যই বলা হয় যে বিজ্ঞানীরা নাস্তিক হয় না। এমনিও
দুনিয়াতে নাস্তিকদের সংখ্যা অতি নগন্য। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে
নাস্তিকদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দায়ীদের জন্য এ বিষয়গুলো খেয়াল
করা উচিত। ডারউইনের অনুসারী আগে খুব কম ছিলো। কিন্তু বর্তমানে
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নাস্তিকদের লেখা পড়ানোর কারণে সমাজে নাস্তি
কদের সংখ্যা ভাড়ী হচ্ছে।
ডারউইনের বক্তব্য মানুষ নাকি বানর থেকে এসেছে। গাছে ঝুলতে ঝুলতে
ঘসা লেগে লেগে এক সময় তার লেজ পড়ে যায় এবং সে মানুষ হয়ে
যায়। সে বলে বিশ্বাস না হলে পেছনে হাত দিয়ে দেখো এখনো সেখানে
পূর্বের লেজের আলামত নাকি দেখা যায়। আরে বোকার দল, এখনও
চিড়িয়াখানায় বানর দেখা যায়। বনে জঙ্গলে লক্ষ লক্ষ বানর পাওয়া যাবে।
যদি সত্যিই মানুষ বানর থেকে এসে থাকে তাহলে এখন আধা মানুষ আধা
বানর, বা পোয়া মানুষ পাওয়া যায় না কেন? এখন সেই বিবর্তন বন্ধ
কেন?
কোন একটি প্রাণীর সঙ্গে অপর প্রাণীর কোন একদিকে মিল থাকলেই যে
সে তার অংশ এটি সম্পূর্ণ বোকার প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। পাবদা
মাছ আর বোয়াল মাছ দেখতে প্রায় এক হলেও পাবদা মাছ কিন্তু বোয়াল
মাছের পূর্বপুর“ষ নয়। গজাল মাছ, শৌল মাছ, টাকি মাছের মধ্যে মিল
আছে, তাই বলে কি এগুলো একটি অপরটির পূর্ব পুর“ষ? মোটেই নয়।
এরকমভাবে আরেক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করলেন যে এই পৃথিবী নাকি
একটি মহা বিষ্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিগব্যাং আবিস্কার
করলো আর খুব খুশি হলো। এর বিপক্ষের বক্তব্য আমরা কুরআন এবং
বিজ্ঞান থেকে দেখানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এজন্যই আমরা
বলেছি সত্যিকারের বিজ্ঞানী যারা তারা কুরআনের সামনে নত হয়ে আসে।
আলাহর দীনের সামনে নত হয়ে আসে। তুলা গাছেও ফল হয় তুলা হয়।
আর আম-কাঠাল গাছেও ফল হয়। কিন্তু তুলা গাছের তুলা যখন পাকে
তখন তা হাল্কা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। ঘার মোটা হয়ে যায় এরপর
তা ফেটে যায় এবং বাতাসে উড়ে যায়। পক্ষান্তরে অন্যান্য উপকারী ফল
গাছের ফল পাকলে তা নত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।
একইভাবে নাস্তিক যারা তারা দুনিয়াতে থাকে যেন দুনিয়াই সর্বস্ব।
খাও-দাও ফুর্তি করো। দুনিয়াটা মস্ত বড়ো। মক্কায়ও এধরণের গুটি
কতেক মুশরিক ছিলো। তাদের সম্পর্কে কুরআনে মহান আলাহ বলেছেন,
অর্থ: “জীবন তো কেবলমাত্র একটিই, (খাবো আর আনন্দ ফুর্তি করবো)।
আমরা মরে যাই এবং বেঁেচ থাকি। আমরা কখনোই পুনুর“জ্জীবিত হবো
না।” (সূরা মু’মিনুন, আয়াত ৩৭)
নাস্তিকরা এসব অন্যদেরকেও শেখায়। এরপর মরার আগে তাদের মনে
ভয় ঢুকে। তারা তখন বলতে থাকে আমাকে হাসপাতালে দান করো।
কবর দিয়ো না। কারণ তারা জানে যদি তাকে কবর দেয়া হয় তাহলে
তাকে সেই কবরের মাঝে এমন বাড়ি মারা হবে মাথা ভেঙ্গে ৭০ গজ দূরে
চলে যাবে। আবার তা জোড়া লাগবে আবার বাড়ি মারা হবে। এই ভয়
মৃত্যুর আগে তাদের মনে ঢুকে আল্লাহই এটি তাদের ভেতর ঢুকিয়ে দেন।
এজন্যই তারা বলে, আমাকে কবর দিয়ো না, হাসপাতালে দান করো।
এক নাস্তিক (ড. আহমদ শরীফ) যে সারা জীবন আল্লাহকে অস্বীকার
করেছে। মরার আগে সে বললো আমাকে হাসপাতালে দান করে দিও।
তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তাররা হাত
জোড় করে ক্ষমা চাইলো গবেষণার জন্য এর লাশ আমাদের দরকার নাই
বলে ফেরত দিলো। আরেক হাসপাতালে নিয়ে গেলো সেখান থেকেও
ফেরত পাঠানো হলো। শেষ পর্যন্ত একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে
গেলো আর কি করবে। এই হলো তাদের দূরাবস্থা।
আমাদের মনে রাখতে হবে আলাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার পরিচয়
জানানোর সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি পাতায় পাতায় তার
পরিচয় পাওয়া যায়। কাজেই যারা প্রকৃত জ্ঞানী বিজ্ঞানী তারা আল্লাহর
সামনে নত হয়ে আসবে। এজন্য আল্লাহ তার নিজের বিস্তারিত পরিচয়
দেন নি। তার মাখলুকাতের মাঝেই তার পরিচয় নিহিত রয়েছে। সূরায়ে
নাহলের ৬৬ নয় আয়াতে তার পরিচয় দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে।
অর্থ: “আর তোমাদের জন্য পশুর মধ্যে রয়েছে শিক্ষনীয় বিষয়। এর রক্ত
এবং বর্জের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য আমি সুপেয় দুধ বের করে দেই।
যা পানকারীদের জন্য তৃপ্তিদায়ক সুন্দর ও সুস্বাদু। আর বিভিন্ন ফল-
ফলাদি যেমন খেজুর-আঙুর এর মাধ্যমে তোমরা রিযক গ্রহণ করে থাকো।
নিশ্চয়ই এই সকল বিষয়ের মধ্যে নিদর্শন আছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের
জন্য।” (সূরা নাহল, আয়াত ৬৬-৬৭) এরপর বলছেন,
অর্থ: “আলাহ রাব্বুল আলামীন মৌমাছিকে নির্দেশ দিলেন তোমরা পাহাড়ে
গিয়ে, গাছের উপরে এবং বিল্ডিংয়ের কার্ণিশে তোমরা ঘর তৈরী করো।
অত:পর তোমরা সব ফল এবং ফুল থেকে রস সংগ্রহ করো। তোমার
রবের দেখানো পথে চলতে থাকো। এরপর তার পেট থেকে বিভিন্ন রংয়ের
সুমিষ্ট পানীয় বের হয় যার মধ্যে মানুষের জন্য শেফা বা রোগমুক্তি।
নিশ্চয়ই এই সকল বিষয়ের মধ্যে নিদর্শন আছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের
জন্য।” (সূরা নাহল, আয়াত ৬৮-৬৯)
ঘর তৈরী করার জন্য ইট-সিমেন্ট ও কেমিকেল দরকার। মহান আলাহ
তাদের মধ্যে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তৈরী করে দিলেন। আপনারা দেখবেন মৌমাছি যখন ঘর বানায় তখন তারা আগে গাছের মধ্যে এক ধরণের
কেমিক্যাল দিয়ে তার সাথে ঝুলিয়ে ঘর বানায়। এমন ঘর যাতে অনেক
সময় ১০ মন পর্যন্ত মধু সুন্দরবনে ঝুলে থাকে। কিন্তু তা ছিড়ে পড়ে না।
এতো মজবুত কেমিকেল দিয়ে তারা ঘর বানায়। আজ পর্যন্ত আপনারা
কেউ শুনেছেন যে, মধুর ওজন বহন করতে না পেরে কোন মৌচাক ছিড়ে
গেছে? শুনেন নি। এবার ঘর তৈরী করার জন্য পানিং ইঞ্জিনিয়ার দরকার।
তাদের তো আর বুয়েট নেই, কুয়েট নেই। মহান আলাহ তাদের মধ্যেই
পানিং ইঞ্জিনিয়ার সৃষ্টি করে দিলেন। আপনার যান গিয়ে মৌমাছির ঘর
গুলো মেপে দেখে আসুন। তাদের প্রতিটি ঘর ষষ্ঠকোন বিশিষ্ট্য।
নিজেদের মাষ্টার বেডর“ম আলাদা। বাচ্চাদের ঘর আলাদা। মধু রাখার
ঘরও আলাদা। সুবহানালাহ।
ঘর তৈরীর পর কিভাবে মধু সংগ্রহ করতে হবে তাও মহান আলাহ তাদের
শিখিয়ে দিয়েছেন। মধুর সন্ধান করা এবং দূর দূরান্ত থেকে মধু আনতে
গিয়ে কোন মৌমাছি যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য তাদের মধ্যে কম্পাস
তথা দিক নির্ণয়কারী যন্ত্রও স্থাপন করে দিয়েছেন। বিজ্ঞান আবিষ্কার
করেছে যে, মৌমাছিরা ১০ মাইল পর্যন্ত দূর থেকে নিজেরা নিজদের
একটি বিশেষ শিংয়ের নাড়া-চাড়া করার দ্বারা নিজেদের অবস্থান শনাক্ত
করতে পারে এবং ঠিক ঠিক স্থানে গিয়ে মধু নিয়ে আবার নিজেদের ঘরে
ফিরে আসতে পারে। এই ব্যবস্থা যিনি করেছেন, তিনিই আমাদের রব।
এই চর্চা না হওয়ার কারণে আজকে অনেক মুসলিম যুবক তার রবের
পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে থেকে এক সময় নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। তাই
আমাদেরকে আমাদের রব সম্পর্কে জানতে হবে। এভাবে আমাদের রবের
পরিচয় জলে, স্থলে, আকাশে, নিজের মধ্যে সর্বস্থানেই রয়েছে। সেগুলো
আমাদের জানা এবং বোঝা দরকার আর এজন্য প্রয়োজন একটু সঠিক
জ্ঞানের। এজন্যই হযরত ইব্রাহীম আ. একদিন তার পিতাকে বললেন,
অর্থ: “আর স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন হযরত ইব্রাহীম আ. তার
পিতা আযরকে বললেন, হে আমার পিতা, আপনি কি একটি পাথরকে
ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয়ই আমি আপনাকে এবং আপনার
জাতিকে দেখতে পাচ্ছি যে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর মধ্যে নিপতিত
আছো।” (সূরা আনআম, আয়াত ৭৪)
হযরত ইব্রাহীম আ. এর পিতা ইব্রাহীম আ. কে জিজ্ঞাসা করলেন, কি
বলছো তুমি? আমরা গোমরাহীর মধ্যে আছি? তোমার কি প্রমাণ আছে
এব্যাপারে?
হযরত ইব্রাহীম আ. তার রবকে চিনেছিলেন প্রমাণসহকারে। আলাহ
তাআলা হযরত ইব্রাহীম আ. কে যেভাবে তার রবের সন্ধান দিয়েছিলেন
সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে পুরো ঘটনা উলেখ করে দিয়েছেন। হযরত
ইব্রাহীম আ. একদিন বসে রবের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। তিনি
ভাবছিলেন তার গোত্রের লোকদের পূজার কথা। তিনি চিন্তা করছিলেন
কি হলো আমার সম্প্রদায়ের তারা নিজ হাতে যেই মূর্তি তৈরী করে, যা
নিজে খেতে পারে না, কারো কোনে উপকারে আসে না তা কি করে রব
হতে পারে। তিনি বিষয়টি নিয়ে সারা রাত গবেষণা করতে লাগলেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের ৭৬ নাম্বার আয়াত থেকে দেখেন আল্লাহ
সেখানে বলছেন,
অর্থ: “অত:পর যখন রাতের আঁধার নেমে আসলো তখন হযরত ইব্রাহীম
আ. আকাশের দিকে তাকালেন। সেখানে তিনি সুন্দর সাজানো-গোছানো
তারকারাজি দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, এগুলোই মনে হয় আমার
রব হবে। এরপর যখন তারকাগুলো ডুবে গেলো তখন তিনি বললেন যে
ডুবে যায় সে আমার রব হতে পারে না। আমি ডুবে যাওয়াদেরকে
ভালোবাসি না। এরপর যখন চন্দ্র উদিত হলো, তখন তিনি দেখলেন যে
আরে এটি তো আরো বড়। (অনেক সুন্দর এর আলো) এটিই মনে হয়
আমার রব হবে। এরপর যখন আবার চন্দ্রও ডুবে গেলো তখন তিনি
বলতে লাগলেন, যদি আমার রব আমাকে হেদায়াতে না দেন, আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন তাহলে আমিও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো। এরপর যখন
সকালে সূর্য উদিত হলো, তিনি সূর্যকে আরো বড় দেখলেন তখন তিনি
বললেন, এটি তো বড়, এটিই মনে হয় আমার রব। এরপর যখন সূর্য ডুবে
গেলো তখন হযরত ইব্রাহীম আ. বললেন, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা
যেনে রাখো আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমি আমার
স্বত্ত্বাকে সেই মহান সৃষ্টিকর্তার দিকে মনোনিবেশ করলাম যিনি এই সকল
আসমান, যমীন, চন্দ্র-সূর্য তারকা-নক্ষত্র সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন তিনিই
আমার রব। আর আমি অবশ্যই মুশরিকদের দলভুক্ত নই।” (সূরা
আনআম, আয়াত ৭৪)
অন্যত্র এই সকল চন্দ্র-সূর্যের ইবাদত করতে নিষেধ করে বলা হয়েছে,
অর্থ: “আর মহান আলাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাত-
দিন, সূর্য্য-চন্দ্র ইত্যাদি। সূতরাং যদি তোমরা কেবলমাত্র স্রষ্টার ইবাদাত
করতে চাও তবে তোমরা সূর্য্য কিংবা চন্দ্রের ইবাদত করো না, বরং এক
আলাহরই ইবাদত করো যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা
ফুস্সিলাত, আয়াত ৩৭)
ধন্যবাদ লিখাটি পড়ার জন্য।